‘সমন্বিত অবস্থান’ নিয়ে শরণার্থী সংকট মোকাবেলার প্রচেষ্টা ইইউ'র

গ্রিস-মেসিডোনিয়া সীমান্তে শরণার্থীরাহাজার হাজার অভিবাসীকে তুরস্কে ফেরত পাঠানোর প্রস্তাবের ব্যাপারে সমন্বিত অবস্থান নিতে সম্মত হয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। বৃহস্পতিবার এক টুইট বার্তায় খবরটি নিশ্চিত করেছেন লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী জেভিয়ার বেটেল। প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য শুক্রবার তা তুরস্কে পাঠানোর কথা রয়েছে। তুরস্ক এই প্রস্তাবে সম্মত না হলে নতুন বৈঠক করে নতুন সিদ্ধান্ত নেবেন ইউরোপীয় নেতারা। আর তুরস্ক এই প্রস্তাবে সম্মত হলেও সংকটের নিরসন হবে না। এরইমধ্যে প্রস্তাবটিকে মানবাধিকারবিরোধী উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা।
টুইটারে লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী বেটেল বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বিত অবস্থানের ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছে। শুক্রবার ইইউ কাউন্সিলের বৈঠক হওয়ার আগে তা তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপে অভিবাসীদের যে ঢল নেমেছে তা শিথিল করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত ২৮টি দেশের নেতারা ব্রাসেলসে বৈঠক করে যাচ্ছেন। আলোচনার টেবিলে উত্থাপিত প্রস্তাবটিকে একটির প্রবেশ, একটির প্রস্থাননীতি নামে ডাকা হচ্ছে। এ নীতির আওতায় যেসব অভিবাসন প্রত্যাশী গ্রিসে পৌঁছাবেন কিন্তু অভিবাসনের অনুমতি পাবেন না তাদেরকে তুরস্কে ফেরত পাঠানো হবে। অন্যদিকে শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় ইইউ থেকে কোটি কোটি ইউরো অর্থ সহায়তা চায় তুরস্ক। সেই সঙ্গে ইউরোপীয় দেশগুলোতে তুর্কি নাগরিকদের জন্য ভিসামুক্ত ভ্রমণের অনুমতিও চাওয়া হচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জোরালো কণ্ঠে বলেন যে, বৃহস্পতিবার যে সমঝোতা হয়েছে তা চুক্তির ব্যাপারে হয়নি, সমন্বিত অবস্থানের ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছে। যদি তুরস্ক সরকার প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে তবে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করতে ইইউ নেতারা আবারও বৈঠকে মিলিত হবেন বলেও জানান তিনি।

ইউরোপগামী অভিবাসী

শরণার্থী সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ হিসেবে প্রস্তাবিত চুক্তি চূড়ান্ত করতে শুক্রবার তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেত দাভুতোগলুর সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন ইউরোপীয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক। তবে চুক্তি চূড়ান্ত হলেও আগামী এপ্রিলের মধ্যে তুরস্ককে দেওয়া শর্ত ও জুনের মধ্যে বাকি শর্তগুলো পূরণ করলেই তুরস্কের নাগরিকদের ইউরোপে ভিসামুক্ত চলাচলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট।

ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্র্যান্স টিমারম্যানস বলেন, 'তুরস্কের নাগরিকদের ইউরোপে ভিসামুক্ত চলাচলের জন্যে সুনির্দিষ্ট কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে। এর জন্যে সোজাসাপ্টা কোন পথ নেই। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ করতে পারলেই কেবল তুর্কীদের ভিসামুক্ত চলাচলের সুযোগ দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।'

তবে এ চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপে শরণার্থী সমস্যার সমাধান হবে- ইইউ নেতারা তা মনে করলেও স্পেনের নাগরিকরা মনে করছেন এর ফলে শরণার্থীদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্যোগে স্পেনের প্রায় ৫০টি শহরে প্রস্তাবিত চুক্তির বিরোধিতা করে বিক্ষোভ হয়। এদিকে প্রস্তাবিত চুক্তি চূড়ান্ত হলেই তুরস্কের নাগরিকরা ইউরোপে ভিসামুক্ত চলাচলের সুবিধা পাবেন কি না তা বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট।

এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার ২৭ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে প্রতিবেশি দেশ তুরস্ক। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম ইউরোপ এতবড় অভিবাসী সংকটে পড়েছে। ২০১৫ সালে অন্তত ১০ লাখ শরণার্থী ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছেন। ক্রমবর্ধমান শরণার্থীদের কোটা প্রথা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে ইউরোপের দেশগুলো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই আরও শরণার্থী গ্রহণে তুরস্কের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে ইউরোপ। সূত্র: বিবিসি, স্কাই নিউজ

/এফইউ/বিএ/