লুলার নিয়োগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফের চিফ অব স্টাফ হিসেবে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। শুক্রবার ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক বর্তমান প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ হিসেবে লুলার নিয়োগে আপত্তি তোলেন। আদালত লুলার বিরুদ্ধে একটি মামলা অধস্তন ফৌজদারি আদালতে পাঠিয়ে দেন।

ধারণা করা হচ্ছিল, চিফ অব স্টাফ হলে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারের মুখোমুখি হওয়া থেকে সাময়িকভাবে হলেও রেহাই পেতেন। আদালতের এমন অবস্থান ঘোষণার আগে দেশের সবচেয়ে বড় শহর সাও পাওলোতে পায় ৯৫ হাজার সমর্থকের উদ্দেশে ভাষণ দেন লুলা দা সিলভা।

প্রবীণ রাজনীতিবিদ লুলার রাজনৈতিক দক্ষতা সরকারের সুরক্ষায় কাজে আসবে বলে উল্লেখ করে গত বুধবার দিলমা রুসেফ তাকে নিজের চিফ অব স্টাফ নিয়োগ দেন। এই নিয়োগের কয়েক ঘণ্টা পরই লুলার বিরুদ্ধে পেট্রোবাস কেলেঙ্কারি তদন্তের প্রধান পুলিশকে নির্দেশ দেন দিলমা রুসেফ ও লুলার কথোপকথনের একটি রেকর্ড প্রকাশ করতে। ওই কথোপকথনে ইঙ্গিত মেলে দুর্নীতি মামলায় লুলার গ্রেফতার হওয়া ঠেকাতে দিলমা তাকে সরকারে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন।

এর আগে ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে লুলা দা সিলভাকে দুর্নীতির দায়ে আটক করে পুলিশ। দেশটির রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত তেল কোম্পানি পেট্রোব্রাস-এর বিশাল অঙ্কের ঘুষ কেলেঙ্কারির তদন্ত করতে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী তাকে আটক করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তার ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।

ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশ কর্মকর্তারা সাবেক প্রেসিডেন্টের বাসভবন তল্লাশি শেষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান।

 

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হলেও তার বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। ব্রাজিলে গত কয়েক বছর ধরে পেট্রোব্রাসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিং-এর অভিযোগ তদন্ত করছে পুলিশ।

গত ৯ মার্চ লুলার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ গঠন করেন সাও পাওলোর প্রসিকিউটররা। পরদিন, ১০ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে তার গ্রেফতার দাবি করেন তারা। অর্থপাচার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লুলাকে ‘আইনি হেফাজতে’ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

প্রসিকিউটররা জানান, গুয়ারুজা রিসোর্টে তিন তলাবিশিষ্ট পেন্টহাউজের মালিকানা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন লুলা। তদন্ত চলাকালে তিনি বাধা দিতে পারেন, তাই তাকে গ্রেফতার করা দরকার। তবে লুলা তার ওপর আরোপ করা সব অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মন্তব্য করেছেন।

প্রধান প্রসিকিউটর ক্যাসিও কনসেরিনো বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় তদন্ত প্রধানত পরিচালিত হবে ওই বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের মালিকানা নির্ধারণের জন্য।’ তবে আদালত এখনও তার গ্রেফতারের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত জানননি।

লুলার আইনজীবী ক্রিস্টিনো জানিন মার্টিনস জানান, সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ‘মিডিয়া ক্যাম্পেইন’ চলছে। তিনি বলেন, ‘যার নামে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে, তিনিই ওই সম্পত্তির মালিক। এখানে কেউ এ নিয়ে অন্য কিছু মনে করলে কিছু যায় আসে না।’

তিনি আরও জানান, লুলা ওই প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছেন, অসম্পূর্ণ অ্যাপার্টমেন্টেও গিয়েছেন। কিন্তু পরে সম্পত্তিটি না নিয়ে অর্থ ফেরত চেয়েছিলেন।

এক সংবাদ সম্মেলনে প্রসিকিউটররা জানান, সিলভা আর তার স্ত্রীসহ অন্তত ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে। ওই তালিকায় সিলভার ছেলের নামও রয়েছে।

 

ব্রাজিলের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা লুলা দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন শেষে ২০১১ সালে নিজ দলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দিলমা রুসেফ-এর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তার শাসনামলে দেশে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয় এবং লাখ লাখ মানুষ দারিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্তি পান। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পেট্রোব্রাস দুর্নীতিতে তার জড়িত থাকার গুঞ্জন ওঠার পর লুলার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে। তবে লুলা এবং তার সমর্থকরা এসব অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক’ বলে উল্লেখ করেছেন। সূত্র: বিবিসি, সিএনএন।

/এমপি/