প্রকৃতিকে রক্ষা করছে যুদ্ধ!

যুদ্ধ প্রায়শই প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করে থাকে। বোমায় উড়ে যায় বনভূমি, মরে যায় বিভিন্ন প্রাণি, দূষিত হয় নদনদী। কিন্তু মানুষের সৃষ্ট যুদ্ধ অনেক সময় রক্ষাও করে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যকে- এমনই মত প্রকাশ করেছেন জীববিজ্ঞানী ড.  থর হ্যানসন।

দ্য ট্রিয়ুমফ অব সিডস শীর্ষক গবেষণার গবেষক ড. থর হাফিংটন পোস্টকে বলেন, ‘গবেষণার ফলাফল কিছুটা অপ্রত্যাশিতই বটে। কিন্তু এর যৌক্তিক ব্যখ্যা রয়েছে। কেননা, যুদ্ধপীড়িত অঞ্চলগুলোতে মানুষের কর্মকাণ্ড কমে যায়, ফলে জীববৈচিত্র্য বিকশিত হতে পারে।’

এই ফলাফলের সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হতে পারে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্ত অঞ্চল। যুদ্ধের কারণে ১৯৫৩ সাল থেকে বিরাট অঞ্চলকে দুই দেশের সীমান্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ওই অঞ্চলের জীববৈচিত্র লক্ষ্য করার মতো বিকশিত হয়েছে বলে জানান ড. থর। তিনি বলেন, ‘ওই অঞ্চলে এমন সব জীবের দেখা পাওয়া যায় যেসব অন্যান্য অঞ্চলে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।’

এমন আরও কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরেন ড. থর। ভিকাস দ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী ২০০৩ সাল পর্যন্ত বোমা হামলা চালায়। মার্কিন নৌবাহিনী চলে যাওয়ার পর ওই অঞ্চলটিতে পরিবেশগত বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ সার্ভিসের দেওয়া তথ্যমতে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সামুদ্রিক প্রাণিবৈচিত্রও দেখা যায় ওই অঞ্চলেই।

তার কয়েক হাজার মাইল দক্ষিণেই অবস্থিত ফকল্যান্ড আইল্যান্ড। যেখানে ১৯৮২ সালের ফকল্যান্ড যুদ্ধের পর থেকে পোঁতা হয়েছে অন্তত ২০ হাজার স্থলমাইন। সে কারণে ওই অঞ্চলে মানুষ কমে যায় ব্যাপকহারে। ফলে ওই অঞ্চলে পেঙ্গুইনের বংশবৃদ্ধি তরান্বিত হয়।

এ ছাড়াও আরেকভাবে যুদ্ধের মাধ্যমে উপকৃত হয় প্রকৃতি। উদাহরণ হিসেবে ওই অঞ্চলেরই ২ লাখ ৬০ হাজার একর ভূমির কথার জানান ড. থর। সেনা প্রশিক্ষণের জন্য সংরক্ষিত ওই অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য রয়েছে দেখার মত।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সংরক্ষিত গুয়ানতানামো বে অঞ্চলেও দেখা গিয়েছে একই বাস্তবতা। বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্যও ব্যবহৃত হয় ওই অঞ্চল।

ইউনিভার্সিটি অব ভারমন্ট গান্ডের ইন্সটিটিউট ফর ইকোলজিক্যাল ইকনমিক্সের গবেষক জো রোমান বলেন, ‘গুয়ানতানামো বে খুব আদিম শহর নয়। তবে নগরের মতো সভ্যও নয়।’ তিনি আশা করেন এই ঘাঁটিটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।

এ ছাড়াও আরও বেশ কিছু বিজ্ঞানীও এ বিষয়ে একমত হন যে, শুধু বোমা ও বন্দুকের গুলিই নয়, অত্যাধিক শক্তির ব্যবহার, প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং বর্জ্য তৈরি করাও প্রকৃতিকে বহুলাংশে ধ্বংস করে। পরিবেশ রক্ষার অনেক অজানা দিকও যুদ্ধ থেকে বিজ্ঞানীদের শেখার আছে।

ড. থর হ্যানসন বলেন, ‘যুদ্ধ অবশ্যই খারাপ। তবে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করতে হলে যুদ্ধপীড়িত অঞ্চলগুলোকেই বেছে নেওয়া উচিত।’ সূত্র: হাফিংটন পোস্ট

/ইউআর/এএ/