বাংলাদেশ ব্যাংকে সাইবার ডাকাতির পর যা করছে উদ্বিগ্ন সুইফট

নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশাল অংকের তহবিল হ্যাকিং-এর পর অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও একই ধরনের ঘটনার আশঙ্কা করছে ব্রাসেলসভিত্তিক সংস্থা সুইফট। এ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। ধারণা করা হচ্ছে, হ্যাকাররা সম্ভবত বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট মেসেজিং তথ্যগুলো পেয়ে গিয়েছিল। এমন আলোচনা প্রকাশ্যে আসতেই আন্তঃব্যাংক আর্থিক লেনদেনের এ সংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার হ্যাকিং-এর পর তারা ব্যাংকগুলোতে দরকারি সুরক্ষার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পরামর্শ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। রবিবার প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তাদের এ পরিকল্পনার কথা জানান। উল্লেখ্য, এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তরে ব্যবহৃত সঙ্কেতলিপি আর এর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানই হলো সুইফট। 

ব্রাসেলসে সুইফটের প্রধান কার্যালয়

সংস্থাটির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সোমবার (আজ) তারা বিশ্বের তিন হাজার অর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি লিখে এ বিষয়ে সতর্ক করবে। এতে ব্যাংকগুলোকে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনার জন্য অনুরোধ করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘটনার পর আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনার গুরুত্ব নিয়েও ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কথা বলবে সুইফট।

নিরাপদে অর্থ লেনদেন করার জন্য এই সুইফট মেসেজিং পদ্ধতি সারা পৃথিবীর ব্যাংকগুলো ব্যবহার করে। তবে সুইফট কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই ঘটনায় তাদের মূল বার্তা বিনিময় ব্যবস্থার কোনও ক্ষতি হয়নি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সম্ভবত ওই হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার সিস্টেমে ঢুকে কয়েক সপ্তাহ ধরে লেনদেন পর্যবেক্ষণ করেছিল। কখন কিভাবে অর্থ হাতিয়ে নেবে তার পরিকল্পনা করেছিল।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে ব্যাংকের কেউ জড়িত ছিল এমন প্রমাণ তারা এখনও পাননি, তবে ব্যাংকিং-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বা এ সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানে এমন কেউ হয়তো এতে সহায়তা করেছেন। তারা ব্যাংক কর্মীদের ওপর নজরদারি করে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এখন বের করার চেষ্টা করছেন কিভাবে হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমে ঢুকতে পেরেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা-বিষয়ক পরামর্শক রাকেশ আস্তানা। তিনি বিশ্বব্যাংকের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাবেক উপ-প্রধান কর্মকর্তা। তার নেতৃত্বে ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিক্স-এর একটি ফরেনসিক তদন্ত দল এ ঘটনার তদন্ত করছে।

রাকেশ আস্তানা রয়টার্সকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই ঘটনার তদন্তের বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। তবে সোমবার (আজ) বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিতে পারে।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যুক্তরাষ্ট্রে জমা থাকা অর্থ থেকে চুরি যাওয়া অংশের সন্ধান পেতে ফিলিপাইনের অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং এজেন্সিকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। দেশের সব ব্যাংককে তাদের বিদেশের অ্যাকাউন্টে রাখা অর্থ রক্ষায় সব ধরনের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সূত্র: রয়টার্স।

/এমপি/