মন্ত্রী হচ্ছেন সু চি

মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী এই নেত্রী মন্ত্রী হচ্ছেন অবশেষেমিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি)- নেত্রী অং সান সু চি অবশেষে মিয়ানমারের নতুন মন্ত্রী পরিষদে থাকছেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যদিও এর আগে তার দলের একজন মুখপাত্র জানিয়েছিলেন যে তিনি মন্ত্রিপরিষদে থাকছেন না। তবে মঙ্গলবার সকালে পার্লামেন্টের এক অধিবেশনে ১৮ হবু মন্ত্রীর মধ্যে সু চির নামও ঘোষণা দেওয়া হয়। আর এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রীর মন্ত্রিপরিষদে থাকা না থাকা নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা গুঞ্জনের অবসান হলো।
আসছে এপ্রিলে সরকার গঠন করবে এনএলডি। গত নভেম্বরের নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জনের পর থেকে সরকার গঠন নিয়ে খুব সীমিত তথ্য জানাচ্ছে দলটি। সাংবিধানিক বাধার কারণে দলীয় প্রধান হওয়ার পরও প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ নেই সু চি’র। এমন অবস্থায় সু চি মন্ত্রিপরিষদে থাকছেন কি থাকছেন না তা নিয়ে শুরু হয় গুঞ্জন। আর সে গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে মঙ্গলবার পার্লামেন্ট স্পিকার মান উইন খাইং থান ১৮ জন হবু মন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেন, যার মধ্যে সু চিও রয়েছেন। তবে মন্ত্রীদের নাম ঘোষণা করলেও ৭০ বছর বয়সী সু চি কিংবা অন্য মন্ত্রীদের কাকে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হবে তা জানানো হয়নি।
২১টি মন্ত্রণালয়ের জন্য কেবল ১৮ জন মন্ত্রীর নাম ঘোষণা করায় গুঞ্জন উঠেছে যে সু চি ৪টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকবেন। মিয়ানমারের স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, সু চি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেতে পারেন। তবে সব গুঞ্জনের অবসান হবে আসছে বৃহস্পতিবার। ওইদিন পার্লামেন্টে মন্ত্রীদের দফতর বণ্টন করা হবে।

কার্যনির্বাহের অংশ হিসেবে সু চিকে তার এমপি পদটি ছেড়ে দিতে হবে।

এর আগে, এনএলডি’র এক মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, সু চি মন্ত্রিপরিষদে থাকছেন না। তবে তিনি ক্ষমতাসীন দলের প্রধান নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আর তাতে ওই দলের দ্বারা গঠিত সরকারকেও নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন।

সাংবিধানিক বাধার কারণে প্রেসিডেন্ট পদটি পাবেন না জেনে নির্বাচনের আগে থেকেই ‘প্রেসিডেন্টের ঊর্ধ্বে’ থেকে সরকার পরিচালনার অঙ্গীকার করেন সু চি। চলতি মাসেই সু চির উপদেষ্টা থিন কিয়াওকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করাকে সু চি’র সে শপথের বাস্তবায়ন বলেই মনে করা হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদের তালিকায় সু চিই একমাত্র নারী। এছাড়া তালিকায় সাবেক রাজবন্দি থেইন সোয়ে এবং জাতিগত গোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত নাইং থেট লেউয়িনের নাম রয়েছে।

গণতান্ত্রিক পার্লামেন্টের ঐতিহাসিক দিনে সু চি

গুরুত্বপূর্ণ তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকছে সেনাবাহিনী। মিলিটারি-কমান্ডার-ইন চিফ প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র এবং সীমান্তবিষয়ক মন্ত্রীদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন।

পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে সু চি’র ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বিধিনিষেধ রয়েছে। মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী, কোনও বিদেশিকে বিয়ে করলে বা সন্তানদের কেউ অন্য দেশের নাগরিক হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। সু চি’র স্বামী মাইকেল অ্যারিস ছিলেন একজন ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ। তার দুই সন্তানও ব্রিটিশ নাগরিক

১৯৬২ সাল থেকে মিয়ানমারের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করছে দেশটির সামরিক বাহিনী। এ সময়ের মধ্যে জান্তা সরকারের রোষানলে ১৫ বছর সু চি’কে গৃহবন্দী অবস্থায় কাটাতে হয়েছে। গত ২০ বছর ধরে মিয়ানমারে সু চি’র দলকে সরকারের প্রতিপক্ষ মনে করা হতো। এ সময়ে দলটির বহু নেতাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে ২৫ বছর পর প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে সু চি’র দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও দেশটির পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর প্রভাব থাকছে। কারণ তাদের জন্য ১৬৬টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও থাকছে তাদের হাতে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

/এফইউ/বিএ/