চীনা গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং সংশ্লিষ্ট চুম্বক রফতানি স্থগিত হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছে গাড়ি, নভোযান, সামরিক সরঞ্জাম এবং সেমিকন্ডাক্টর নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। গত এপ্রিল থেকে রফতানির রাশ টেনে ধরার সিদ্ধান্ত নেয় বেইজিং।
বিশ্বের বিরল খনিজের (রেয়ার আর্থ ম্যাটেরিয়াল) প্রায় ৯০ শতাংশের উৎসই চীন। এই খাতে তাদের নিয়ন্ত্রণকে এখন বেইজিংয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে একটি কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে দেখা হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব সবুজ জ্বালানি তৈরিতে এই বিরল খনিজগুলো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হওয়ায় বিষয়টি আরও গুরুত্ব পাচ্ছে।
ইউরোপের কয়েকটি গাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাণকারী কারখানা ইতিমধ্যে উৎপাদন স্থগিত করেছে এবং মার্সিডিজ-বেঞ্জ সম্ভাব্য ঘাটতির ঝুঁকি এড়াতে বিকল্প পন্থা খতিয়ে দেখছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফোর্ডের প্রধান অর্থবিষয়ক কর্মকর্তা শেরি হাউজ বলেছেন, (গাড়ি সংশ্লিষ্ট) পুরো ব্যবস্থাটি সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করার জন্য অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কয়েক সপ্তাহ আগে অর্ডার করতে হয়। বর্তমান নিয়ন্ত্রণের কারণে পুরো প্রক্রিয়াটি যথেষ্টা চাপে পড়েছে।
চীনের প্রশাসনিক স্তরগুলো কখনও মসৃণ আবার কখনও রুক্ষ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, আমরা সামলে চলার চেষ্টা করছি। এখনও সমস্যাটি আছে এবং আমরা এর মধ্যেই কাজ করছি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাণিজ্য কমিশনার মারোস সেফচোভিচ জানিয়েছেন, তিনি চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে রেয়ার আর্থ ইস্যু নিয়ে দ্রুত সমাধানে একমত হয়েছেন।
ইইউ শিল্প কৌশল কমিশনার স্টেফান সেজুরনে বলেন, চীনের মতো নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা হ্রাসের পথ আমাদের অবশ্যই খুঁজতে হবে।
ইউরোপের গাড়ির যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী সংগঠন সিএলইপিএ জানায়, রফতানি অনুমোদনের জন্য শত শত অনুরোধ করা হলেও মাত্র ২৫ শতাংশ অনুমোদন পেয়েছে। বাকিগুলো ‘প্রক্রিয়াগত অজুহাতে’ বাতিল হয়েছে। সংগঠনটি জানায়, বেশ কয়েকটি উৎপাদন লাইন বন্ধ হয়ে গেছে এবং আরও বন্ধের আশঙ্কা রয়েছে।
চীনের রফতানি নিয়ন্ত্রণ মূলত মার্কিন নতুন শুল্কনীতির বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপের অংশ হলেও তা বৈশ্বিকভাবেই প্রযোজ্য। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পপতিরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
মার্সিডিজ বেঞ্জ জানিয়েছে, তারা এখনই ঘাটতির সম্মুখীন না হলেও জরুরি মজুদের জন্য সরবরাহকারীদের সঙ্গে আলোচনা করছে। বিএমডব্লিউ জানিয়েছে, তাদের সরবরাহ চেইনের কিছু অংশ ব্যাহত হলেও নিজস্ব কারখানাগুলো সচল রয়েছে।
এদিকে জার্মান, মার্কিন ও ভারতীয় বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতারা চীনের এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রকাশ্যে উদ্বেগ জানিয়েছে।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স