উত্তর কোরিয়ায় আটক গোয়েন্দার ক্ষমা প্রার্থনা!

উত্তর কোরিয়ায় গোয়েন্দাবৃত্তির অভিযোগে আটক এক মার্কিন নাগরিক নিজের কৃতকর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তাকে ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদানের নয় দিন পর শুক্রবার সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন তিনি।

উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং-এ এক সংবাদ সম্মেলনে কিম তং চল নামের ওই মার্কিন নাগরিক জানান, তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীনদের পতনের একটি পরিকল্পনা তৈরি এবং জনগণের মাঝে ধর্মীয় প্রচারণার কাজ করছিলেন।

কিম তং চল

তিনি নিজের কাজকে ‘লজ্জাজনক এবং বর্ণনাতীত’ বলে উল্লেখ করে ওই অপরাধের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং উত্তর কোরিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তিনি জানান, গত বছর অক্টোবরে তাকে র‍্যাসন থেকে আটক করা হয়।

কিম দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্সে বাস করতেন তিনি। সেখান থেকে তিনি ২০১১ সালে চীন-উত্তর কোরিয়া সীমান্তবর্তী ইয়াংজি শহরে আসেন। সেখান থেকে প্রতিদিন উত্তর কোরিয়ার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল র‍্যাসনে যেতেন তিনি। সেখানকার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট তিনি।

সংবাদ সংস্থা এপি জানায়, উত্তর কোরিয়ায় আটক মার্কিন এবং অন্যান্য বিদেশী নাগরিকদের প্রায়ই সংবাদ সম্মেলনে হাজির করা হয়, তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং উত্তর কোরিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রশংসা করার জন্য। ওই আটক ব্যক্তি অনেকেই তাদের মুক্তির পর জানিয়েছেন, তারা সংবাদ সম্মেলনে কি বলবেন, তা তাদের আগে থেকে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস জানিয়েছে, কিমের বিষয়টি কোনওভাবেই তাদের সংস্থার সঙ্গে জড়িত নয়। তবে এ সম্পর্কে আর কোনও কথা বলতে চায়নি সংস্থাটি।

উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে উত্তর কোরিয়া ভ্রমণে গিয়ে পিয়ংইয়ং থেকে একটি রাজনৈতিক ব্যানার চুরির চেষ্টার জন্য এক মার্কিন শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করা হয়। ২১ বছরের ওই ছাত্রের নাম অটো ওয়ার্মবিয়ার। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের ছাত্র।

অটো ওয়ার্মবিয়ার

চলতি বছরের ১৬ তারিখ অটো ওয়ার্মবিয়ারকে ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাকে সংবাদ সম্মেলনের সামনে হাজির করা তিনি বলেছিলেন, ‘একটি গির্জা আমাকে উত্তর কোরিয়া থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্লোগান চুরির জন্য বলেছে, যাতে দেশটির আদর্শিক ঐক্য বিনষ্ট হয় এবং বিনিময়ে ১০ হাজার ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল তারা। আমিও ব্যানার চুরি করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলাম। এখন আমি আমার অপরাধের জন্য উত্তর কোরিয়ার প্রতিটি মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি।’

ওই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জোস আর্নেস্ট বলেছিলেন, ‘যে অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে সাজা দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং পৃথিবীর কোনও দেশে এরকমটা নেই। সুতরাং এটি এখন স্পষ্ট যে, উত্তর কোরিয়া তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মার্কিন ওই নাগরিককে গুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে।’

বর্তমানে ধর্মপ্রচার, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ভঙ্গ এবং গোয়েন্দা বৃত্তির অভিযোগে উত্তর কোরিয়া কর্তৃপক্ষের হাতে তিন দক্ষিণ কোরীয় নাগরিক এবং এক কানাডীয় ধর্মযাজক আটক রয়েছেন। সূত্র: এপি। 

/এসএ/