সিরিয়ার সেইন্ট এলিয়াস গির্জায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। রবিবার (২২ জুন) দেশটির রাজধানী দামেস্কের দোয়েলা অঞ্চলে এই হামলা হয়। নতুন শাসকদের অধীনে এই হামলার ঘটনায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা শঙ্কা আরও ঘনীভূত হলো। ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস (দায়েশ) এই ঘামলার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, দায়েশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক আত্মঘাতী ব্যক্তি অকস্মাৎ গির্জায় প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে। এরপর দেহে থাকা বিস্ফোরক বেল্ট সে ফাটিয়ে দেয়।
কর্তৃপক্ষ বলছে, হামলায় ২০ জনের বেশি নিহত এবং কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন। হামলার পর এলাকাটি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে ফেলেন।
২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরীয় গৃহযুদ্ধের সময় কিছু গির্জা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এভাবে সরাসরি কোনও খ্রিষ্টীয় উপাসনালয়ে এর আগে হামলা হয়নি। দেশটির দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করা বর্তমান ক্ষমতাসীনরা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ দাবি করলেও, তাদের শাসনাধীনেই এই ঘটনা ঘটলো।
এক প্রত্যক্ষদর্শী এএফপিকে বলেছেন, আমরা আতঙ্কে আছি। যুদ্ধের সময় এ ধরনের বিস্ফোরণ দেখেছি আমি।
সে সময় প্রার্থনারত অনেক মানুষ গির্জায় উপস্থিত ছিলেন। বিস্ফোরণের খবর পাওয়ার পর আতঙ্কিত মানুষ স্বজনদের খোঁজে গির্জা অভিমুখে ছুটে যান।
হামলার সময় গির্জায় উপস্থিতদের মধ্যে একজন লরেন্স মামারি। তিনি জীবন নিয়ে বেরিয়ে আসতে সমর্থ হন। ঘটনা স্মরণ করে তিনি বলেন, অস্ত্র হাতে এক ব্যক্তি গির্জায় প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। বিস্ফোরণের আগে কয়েকজন তাকে থামানোর চেষ্টা করছিল।
অন্তত ১০ জন আহত ব্যক্তিকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারে সহায়তা করেছেন মামারি। অ্যাম্বুলেন্স এবং জরুরি পরিষেবা কর্মীরা পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত স্থানীয়রা উদ্ধারকাজে সহায়তা করার সর্বাত্মক চেষ্টা করছিলেন।
ঘটনাস্থলে কাঁদতে কাঁদতে নিজের ছেলের খোঁজ করছিলেন উম্মে জর্জ। একপর্যায়ে বিধ্বস্ত গির্জায় প্রবেশ করে ছেলেকে খুঁজতে দেওয়ার জন্য প্রহরারত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাছে কাকুতি মিনতি করেন।
এএফপির প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, আমার ছেলে গির্জায় প্রার্থনা করতে এসেছিল। আমি তাকে বারবার ফোন দেওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। আমি ওকে খুঁজেও পাচ্ছি না।
আতঙ্কিত এই মা বলেন, আর কোনও দিন ছেলের গলার স্বর শুনতে পাব বলে মনে হচ্ছে না!