‘রহস্যময়’ খোলা চিঠির হোতাদের হন্যে হয়ে খুঁজছে চীন

চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিংপিংকে পদত্যাগ করার অনুরোধ জানিয়ে খোলা চিঠির আদলে লেখা এক ‘রহস্যময়’ অনলাইন পিটিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পুলিশের কাছে আটক থাকা কলামিস্ট জিয়া জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হলেও এ ঘটনার হোতাদের হন্যে হয়ে খুঁজছে চীনের কর্তৃপক্ষ। যে ওয়েব সাইটে এই অনলাইন পিটিশন প্রথম প্রকাশ পায়, সেই সাইটের প্রেসিডেন্ট-সম্পাদক সহ অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন এখনও। সরকারের রোষানলে পড়েছেন অন্য ভিন্নমতাবলম্বীরাও। শুক্রবার এ ঘটনায় ১৭ জনের আটক থাকার খবর দেয় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। তারা বলছে, ঘটনার মূল হোতাদের খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে চীন। তবে এ ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের পক্ষের লোকেরা সরব হয়েছেন।

noname

৪ মার্চ এ মাসের শুরুর দিকে চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিংপিংকে পদত্যাগ করতে অনুরোধ করে রাষ্ট্র পরিচালিত ওয়েবসাইট য়ুজি নিউজে লেখা এক অনলাইন পিটিশনের সঙ্গে জিয়ার যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। পিটিশনটি এক অনলাইন সাইটে প্রকাশিত হয়। তবে প্রকাশের পর পরই নামিয়ে নেওয়া হয় চিঠিটি। চিঠিটি কমিউনিস্ট পার্টির একনিষ্ঠ সমর্থকদের কারও লেখা বলেই ধারণা করা হচ্ছে। চিঠিতে প্রেসিডেন্ট জির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা হয়। তাকে সব দায়িত্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

‘রহস্যময়’ ওই খোলা চিঠির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পুলিশের কাছে আটক চীনের ভিন্নমতাবলম্বী কলামিস্ট জিয়া জিয়ার আইনজীবী তার মুক্তির তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এবার আইনজীবী জানিয়েছেন যে জিয়া তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি এখন মুক্ত এবং যে কোনও সময় বাড়ি যেতে পারেন। এদিকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জিয়ার কাছের মানুষদের বরাতে লিখেছে, আসলে জিয়া ওই চিঠি প্রকাশের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন, কেননা ওই চিঠি প্রকাশের পর তিনি য়ুজি নিউজের সম্পাদককে সতর্ক করেছিলেন যে, চিঠিটির জন্য তিনি বিপদে পড়তে পারেন।

চীনের একজন কলামিস্ট

বার্তা সংস্থা এএফপির বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, জিয়াকে ছেড়ে দেওয়া হলেও এ ঘটনার পর য়ুজি নিউজের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক-সহ ৪ জন গত সপ্তাহ থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। পাশাপাশি প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত ৯ জনের নিখোঁজ থাকার তথ্য দিয়েছে বিবিসি। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত একজন চীনা ভিন্নমতাবলম্বীর পরিবারকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, ওয়েন ইয়াংচু নামের ওই ভিন্নমতাবলম্বী অ্যাকটিভিস্ট জানিয়েছেন, তিনি ওই খোলা চিঠি বণ্টনে ভূমিকা নিয়েছেন এমন অভিযোগ থেকেই তার পরিবারের তিন সদস্যকে গত মঙ্গলবার তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। 

খোলা চিঠি নিয়ে আটক ও হয়রানির ঘটনায় সরকারের অবস্থানের নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তারা এটাকে ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি সরকারের অসহিষ্ণুতার এক ভয়াবহ পরিস্থিতি বলে আখ্যা দিয়েছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের চীনভিত্তিক একজন গবেষক উইলিয়ান নি আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘খোলা চিঠির ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কারও প্রতি হয়রানি করা বন্ধ করা উচিত। আটককৃতদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া উচিত।’

প্রসঙ্গত, এর আগে সম্প্রতি হংকং থেকে পাঁচ বই ব্যবসায়ী নিখোঁজ হন। পরে জানা যায়, মূল ভূখণ্ডে তাদের আটকে রাখা হয়েছিল। সূত্র: বিবিসি, গার্ডিয়ান, আল জাজিরা

/বিএ/