গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির চূড়ান্ত প্রস্তাব মেনে নিতে ইরান-সমর্থিত হামাস গোষ্ঠীকে সতর্ক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রস্তাব নিয়ে টালবাহানা করলে পরিণতি ভালো হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেছেন তিনি। মঙ্গলবার (১ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
তিনি বলেছেন, গাজা বিষয়ে ইসরায়েলি ও মার্কিন কর্মকর্তাদের দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ আলাপ হয়েছে। ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত করার সব শর্তে সম্মতি দিয়েছে ইসরায়েল। এখন, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীরার হামাসের কাছে চূড়ান্ত প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন।
এরপরই শুরু করেন স্বভাবসুলভ হুমকি ধামকি। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যতের কথা ভেবে হলেও হামাস এই প্রস্তাব গ্রহণ করবে বলে আমি আশাবাদী। কারণ কোনও কিছু আর তাদের পক্ষে যাবে না, বরং পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হবে। এই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ!
ওইদিনই সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, জিম্মিদের বদলে গাজায় যুদ্ধবিরতি সামনের সপ্তাহ নাগাদ কার্যকর করার বিষয়ে তিনি আশাবাদী। আগামী সোমবার হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসবেন।
ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য সফরকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি শিগগিরই কার্যকর করার বিষয়ে তিনি নেতানিয়াহুর সঙ্গে যথেষ্ট অনমনীয় থাকবেন। অবশ্য, ইসরায়েলি নেতা নিজেই যুদ্ধবিরতি চান বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহ নাগাদ এটি (যুদ্ধবিরতি) হবে বলে আমরা আশা করছি। আমরা জিম্মিদের নিয়ে আসতে চাই।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত এই ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে, অর্ধেক জিম্মির মুক্তি এবং বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছাড়া ও নিহত ফিলিস্তিনিদের মরদেহ ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে।
হামাস ও ইসরায়েলের মতবিরোধের কারণে গাজায় কোনও দীর্ঘস্থায়ী চুক্তি কার্যকর করা এবং টিকিয়ে রাখা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যাপার। হামাসের দাবি, গাজায় কেবল যুদ্ধ সমাপ্তি চুক্তির বিনিময়ে তারা জিম্মিদের ছেড়ে দিতে রাজি আছে। আর ইসরায়েল এতে আপত্তি জানিয়ে বলে আসছে, হামাসকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করার আগ পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ হবে না।
স্বাভাবিকভাবে, হামাসও অস্ত্রত্যাগে রাজি নয়। ফলে, দুপক্ষের বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে কোনও সমাধানও আসছে না।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নেওয়া হয়। এর জবাবে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়, যার ফলে এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্য যেন জ্বলন্ত উনুন হয়ে আছে, যেখানে সাম্প্রতিক ইরানের ঘটনা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি ও মার্কিন হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরও স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প এবং তার সহযোগীরা ইরানের বর্তমান পরিস্থিতির ব্যবহার করে গাজায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছেন।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিন সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের পেছনে ইরানের সমর্থন রয়েছে।