বাংলাদেশ-চীনের যৌথ উদ্যোগে পটুয়াখালিতে ১২ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎকেন্দ্র

দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা পটুয়াখালীর পায়রায় বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হতে যাচ্ছে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এজন্য বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) প্রায় ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স খবরটি নিশ্চিত করেছে।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনের আনুষঙ্গিক সব প্রক্রিয়া শেষে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার র‍্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়েছে। চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দ্য ফার্স্ট নর্থ-ইস্ট ইলেকট্রিক পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এনইপিসি) এবং বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) মধ্যে এ চুক্তি সই হয়। আজ থেকেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে।

Power-plant

বিসিপিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুরশিদ উল আলম বলেছেন, ‘সমান অংশীদারত্বের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ওই প্রকল্পের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।’ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্সহ মোট ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, এই প্রকল্পটি তার অংশ।

খুরশিদ উল আলম জানান, বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৮০ শতাংশ বিনিয়োগ আসবে চীনের কয়েকটি ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া থেকে। ওই বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হবে। কয়লা আমদানি করা হবে ইন্দোনেশিয়া, চীন এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড এবং চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের সমান অংশীদারিত্বের (৫০:৫০) ওপর প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড’ বা বিসিপিসিএল শীর্ষক একটি কোম্পানি গঠন করা হয়।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে প্রায় ৯৮৩ একর জমি বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সেখানকার ১৩২টি জেলে পরিবারকে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, ক্ষতিপূরণসহ তাদের পুনর্বাসিত করা হচ্ছে বিসিপিসিএল নির্মিত নতুন আবাসনে। জানা গেছে, উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য থেকে ইউনিটপ্রতি (এক কিলোওয়াট) শূন্য দশমিক তিন পয়সা রাখা হবে করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) কার্যক্রমের আওতায় জনকল্যাণে ব্যয় করার জন্য।

mega-power-plant

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১৯ সাল নাগাদ চালু করা সম্ভব হবে বলে জানা গেছে। দুই ইউনিটবিশিষ্ট ওই প্রকল্পের প্রতিটা ইউনিট ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। প্রথম ইউনিটটি ২০১৯ সালের এপ্রিলে উৎপাদনে যাবে এবং অন্য ইউনিটটি এর ছয় মাস পর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে বলে জানিয়েছেন খুরশিদ উল আলম। তিনি বলেন, ‘ওই প্রকল্প কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদনই করবে না, সেই সঙ্গে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও করবে।’

বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার এবং উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ সাড়ে আট হাজার মেগাওয়াট। প্রতিবছর ১০ শতাংশ বৃদ্ধি অনুসারে ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা দাঁড়াবে ২৪ হাজার মেগাওয়াটে। সূত্র: রয়টার্স।

/এসএ/বিএ/