প্রেমের কারণে বিমান ছিনতাই এবারই প্রথম নয়

মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) মিসরীয় বিমানটি কেন ছিনতাই করা হয়েছে, তার কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত না হওয়া গেলেও ছিনতাইয়ের সঙ্গে প্রেমের সংশ্লিষ্টতাকে জোরালো করে দেখছেন অনেকে। কারণ ‘ছিনতাইকারী’ সাইফ এলদিন মুস্তফার দাবিগুলোর একটি ছিল সাইপ্রাসে বসবাসরত সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা। তবে প্রেমের জন্য বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগেও এমনটা হয়েছে। প্রেমের কারণে বিমান ছিনতাইয়ের সেইসব পুরনো তথ্য জানা গেছে ব্রিটিশ-মার্কিন সাংবাদিক ব্রেন্ডান. আই. কোয়ের্নারের কাছ থেকে। প্রেম ও সন্ত্রাসজনিত ছিনতাই নিয়ে গবেষণা করেন তিনি। দ্য স্কাইস বিলং টু আস: লাভ অ্যান্ড টেরর ইন দ্য গোল্ডেন এজ অব হাইজ্যাকিং নামে তার একটি বইও রয়েছে। মঙ্গলবার মিসরের বিমান ছিনতাইয়ের সঙ্গে প্রেমের সংশ্লিষ্টতার গুঞ্জন ওঠার পর প্রেমের কারণে আগে ছিনতাই হওয়া বিমানের তথ্য ও ঘটনা টুইট করেন কোয়ের্নার। তার টুইটগুলোকেই এক প্রতিবেদনে হাজির করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এর আগেও প্রেমের কারণে দুইবার বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়েছে।

noname

কোয়ের্নার জানান, ১৯৭১ সালে রিচার্ড ওবার্গফেল নামে মার্কিন নৌবাহিনীর সাবেক এক মেকানিক নিউ ইয়র্ক থেকে শিকাগোগামী একটি বিমান ছিনতাই করে। উদ্দেশ্য ছিল ইতালিতে বসবাসরত চিঠি-বন্ধুর সঙ্গে দেখা করা। কারণ তিনি ওই নারীর প্রেমে পড়েছিলেন।

তবে শুরুতেই ওবার্গফেলের বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ছিল না। ইতালির মানুষের ভাষা বোঝার জন্য নিয়মিত ইতালীয় সংবাদপত্র পড়তেন এবং ইতালীয় রেডিও শুনতেন তিনি। পরে আলিতালিয়া এয়ারলাইন্সে চাকরির আবেদন করেন ওবার্গফেল। তবে সে আবেদনটি নাকচ হয়ে যায়। এরপরই প্রেমিকার কাছে পৌঁছাতে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা সাজান ওবার্গফেল। এরপর আসলো বিমান ছিনতাইয়ের পালা। কিভাবে ছিনতাই করলেন তিনি?

কোয়ের্নারের ভাষ্য অনুযায়ী, ওয়ালথার পি৩৮ পিস্তলের ভয় দেখিয়ে ফ্লাইট ৩৩৫ ছিনতাই করেন ওবার্গফেল। পিস্তলটি তিনি খেলাধূলায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির গুদাম থেকে চুরি করেছিলেন তিনি। বিমানটি নিউ ইয়র্ক ছাড়ার ২০ মিনিট পর এক বিমানবালাকে পেছন থেকে পিস্তল ধরেন তিনি। বলতে থাকেন, ‘আমি আপনাকে আঘাত করব না, যদি আপনি আমার কথা শোনেন।’

মিসরীয় বিমানের ‘ছিনতাইকারী’ সাইফ এলদিন মুস্তফা

এরপর ওবার্গফেল ককপিটে যান। সেখানে গিয়ে তিনি পাইলটের কাছে দাবি করেন, বিমানটি যেন মিলানে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন পাইলট তাকে জানান, বোয়িং ৭২৭ বিমানের আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার সক্ষমতা নেই। তখন তিনি আরেকটি বিমান আনাতে বলেন। তবে শেষ পর্যন্ত আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরের রানওয়েতে জিম্মিদশা চলা অবস্থায় এফবিআই সদস্যের গুলিতে নিহত হন তিনি।

ওই ঘটনাটির উল্লেখ করে কোয়ের্নার টুইটে লিখেছেন, ‘অতীতের চেয়ে এবারের ঘটনাটি স্বস্তিদায়ক, কারণ এবার শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে।

তবে ওবার্গফেলও প্রেমের জন্য বিমান ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত নন। ১৯৬১ সালে আরকানসাসে বসবাসরত সাবেক স্ত্রীকে দেখার জন্য বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন এক তেল শ্রমিক। সূত্র: সিএনএন

/এফইউ/বিএ/