'প্রেসিডেন্টের বস' হওয়ার প্রক্রিয়ায় এক ধাপ এগিয়ে গেলেন সু চি

অং সান সু চিমিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি’র জন্য ‘রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা’ পদ সৃষ্টির প্রস্তাবটি দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষে পাস হয়েছে। সাংবিধানিক বাধার কারণে প্রেসিডেন্ট না হতে পারলেও এ পদের আওতায় সু চি প্রেসিডেন্টের ঊর্ধ্বে থাকার ক্ষমতা পাবেন। দলীয় নেতাদের কেউ কেউ এ পদটিকে  ‘প্রেসিডেন্ট’স বস’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
শুক্রবার পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষে সু চির জন্য ‘রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা’ পদ সৃষ্টির প্রস্তাবটির পক্ষে নিরঙ্কুশ সমর্থন পাওয়া যায়। বিলটি আইনে পরিণত হতে এখনও নিম্ন কক্ষ ও প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। তবে পার্লামেন্টের দুটি কক্ষেই সু চির দল এনএলডি’র প্রাধান্য থাকায় এবং প্রেসিডেন্ট সু চির ঘনিষ্ঠ হওয়ায় বিলটি আইনে পরিণত হতে বেগ পেতে হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
নিজস্ব প্রতিবেদকের বরাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, নতুন পদটি সৃষ্টি হলে সে পদাধিকার বলে সু চি কেবল সরকারকে পরামর্শই দেবেন না, বিচারবিভাগকেও পরামর্শ দিতে পারবেন। পার্লামেন্টে সব দলের ঊর্ধ্বে তার ক্ষমতা থাকবে। এমনকি তার পদটি এমন হবে যে তিনি প্রেসিডেন্টের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে পারবেন। আল জাজিরার প্রতিনিধি জানান, এনএলডির নেতাকর্মীদের কেউ কেউ সু চির এ পদটিকে 'প্রেসিডেন্ট;স বস' বলে ডাকছেন। খিন মাউন্ত মিন্ত নামে এনএলডির এক এমপি বলেন, 'রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার পদটি এমন যে তিনি প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভার সকল সদস্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।'

গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিজয় লাভ করে সু চি’র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)। পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে সু চি’র ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বিধিনিষেধ থাকায় তার সহযোগী থিন কিয়াওকে প্রেসিডেন্ট মনোনীত করা হয়। বুধবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন কিয়াও। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী কোনও বিদেশিকে বিয়ে করলে বা সন্তানদের কেউ অন্য দেশের নাগরিক হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। সু চি’র স্বামী মাইকেল অ্যারিস ছিলেন একজন ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ। তার দুই সন্তানও ব্রিটিশ নাগরিক।

প্রেসিডেন্ট থিন কিয়াওয়ের সঙ্গে সু চি

আর তাই নির্বাচনের আগেই ‘প্রেসিডেন্টের ঊর্ধ্বে’ থেকে সরকার পরিচালনার অঙ্গীকার করেন সু চি। থিন কিয়াওকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করাকে সু চি’র সে শপথের বাস্তবায়ন বলেই মনে করা হচ্ছে।রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার পদটি সু চিকে সরকারের সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজ করার ক্ষমতা দেবে। তিনি নিজের খুশিমতো যে কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন। বিবিসির প্রতিনিধি জানান, অন্যান্য দেশে প্রধানমন্ত্রীরা যে ধরনের দায়িত্ব পালন করেন, অনেকটা সেরকম করেই ‘রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা’ পদটি তৈরি করা হচ্ছে।

এছাড়া মিয়ানমারের নতুন মন্ত্রিপরিষদে পররাষ্ট্র, জ্বালানি, শিক্ষা ও প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সু চি। তবে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা হলে সু চি বাকি পদগুলো ছেড়ে দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

১৯৬২ সাল থেকে মিয়ানমারের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করছে দেশটির সামরিক বাহিনী। এ সময়ের মধ্যে জান্তা সরকারের রোষানলে ১৫ বছর সু চি’কে গৃহবন্দী অবস্থায় কাটাতে হয়েছে। গত ২০ বছর ধরে মিয়ানমারে সু চি’র দলকে সরকারের প্রতিপক্ষ মনে করা হতো। এ সময়ে দলটির বহু নেতাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

তবে ২৫ বছর পর প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে সু চি’র দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও দেশটির পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর প্রভাব থাকছে। কারণ তাদের জন্য ১৬৬টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকছে সেনাবাহিনী। সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি

/এফইউ/