গত সোমবার, ৪ এপ্রিল জঙ্গলমহলের ১৮টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটই ছিল পশ্চিমবঙ্গে এ বারের সাত দফার বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফা। এই ১৮টি বিধানসভার মধ্যে পুরুলিয়া জেলার নয়টি, পশ্চিম মেদিনীপুরের ছয়টি ও বাঁকুড়া জেলার তিনটি। এই তিনটি জেলাতেই ২০১১ পর্যন্ত মাওবাদীদের হাতে প্রচুর মানুষ খুন হয়েছেন, গ্রামের পর গ্রাম মাওবাদীদের সমর্থনে ঢলে পড়েছে।
এবার কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীতে গোটা তল্লাট মুড়ে দিয়ে ভোট হলো বটে, তবে শাসক, বিরোধী কোনও পক্ষের মধ্যেই মাওবাদীদের নিয়ে দুশ্চিন্তার লেশমাত্র দেখা গেল না। বিরোধীদের একাংশ কোথাও কোথাও অভিযোগ করলেন, শাসক দলের জোর খাটানো রুখতে কেন্দ্রীয় বাহিনী তেমন সক্রিয় নয়। উল্টো দিকে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ‘অনর্থক অতি সক্রিয়তায়’ ভোটাররা ভয় পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করলেন শাসক দলের কোনও কোনও নেতা-মন্ত্রী। অথচ মাওবাদী প্রভাবিত তল্লাট বলে চিহ্নিত জঙ্গলমহলে সেই অতি-বাম উগ্রপন্থীদের কথা উচ্চারণ করলেন না কেউই।
ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তালিকায় থাকা দেশের মাওবাদী প্রভাবিত ১১টি রাজ্যের অন্যতম পশ্চিমবঙ্গ। তবে এই ১১টি রাজ্যের মাওবাদী প্রভাবিত ৭৬টি জেলার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সাকুল্যে একটিই জেলা। পশ্চিম মেদিনীপুর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মাওবাদী প্রভাবের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গকে বলা হয় ‘অংশত প্রভাবিত’। কিন্তু এ বার ভোটে যা অবস্থা দেখা গেল, তার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নতুন ভাবে পর্যালোচনা ও মূল্যায়ণ করলে পশ্চিমবঙ্গ হয়তো চলে যেতে পারে ‘সামান্য প্রভাবিত’ গোত্রের মধ্যে। যে শ্রেণিতে ইতিমধ্যেই আছে উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ।
সিপিআই (মাওবাদী)-এর একটি সূত্র জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে শক্তি হিসেবে তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। শীর্ষনেতা কিষেণজি নিহত হয়েছেন, সুচিত্রা মাহাতো-জাগরী বাস্কের মতো নেত্রীরা আত্মসমর্পণ করেছেন, পর পর কয়েক জন নেতী-নেত্রীকে গ্রেফতার করে জেলে পোরা হয়েছে। জঙ্গলমহলে ভোটের দু’দিন আগে, ২ এপ্রিল মাওবাদীদের রাজ্য মিলিটারি কমিশনের প্রধান, বিকাশ ওরফে মনসারাম হেমব্রম সস্ত্রীক ধরা পড়েছেন। বিকাশ ও তাঁর স্ত্রী তারা দু’জনেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহলের গ্রামের বাসিন্দা। এই অবস্থায় মাওবাদীদের ওই সুত্রটি বলছেন, ‘এখনও পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার কিঠু গ্রামে রাতের অন্ধকারে পোস্টার হয়তো সাঁটা যেত, লিফলেট-ও বিলি করা যেত। কিন্তু তাতে মানুষের সাড়া সম্ভবত পাওয়া যেত না। আমরা নিজেদের হাস্যাস্পদ করতে চাইনি। উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি।’
/বিএ/