দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার রাজধানী থিরুভানান্তাপুরমের ৬০ কিলোমিটার দূরবর্তী কোল্লাম জেলার পারাভর পুত্তিঙ্গাল দেবী মন্দিরে রবিবার ভোরে এ অগ্নিকাণ্ড হয়। একটি ধর্মীয় উৎসবের আতশবাজি থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বলে পুলিশ জানিয়েছে।
হামলায় হতাহতের সংখ্যা ও অবস্থা
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এ পর্যন্ত ১০৬ জনের প্রাণহানির খবর দিয়েছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে সাড়ে তিনশো মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় এবং ধ্বংসস্তূপে কারও কারও চাপা পড়ে থাকার আশঙ্কার কারণে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়। হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে মারা যান আরও বেশ কিছু মানুষ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৫৬ জনকে শনাক্ত করা গেছে। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে পারাভর এবং থিরুভানান্তাপুরম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই সবচেয়ে বেশি আহত মানুষ চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ঘটনাস্থলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
এরইমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। এর আগে মোদি এক টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন, তিনি শিগগির কেরালার ওই মন্দিরে পৌঁছাবেন। তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডাকে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে বলেছি।’
নরেন্দ্র মোদি আরও জানিয়েছেন, আশঙ্কাজনকদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারের সাহায্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিশেশজ্ঞ ডাক্তারদের একটি দল ঘটনাস্থলে গেছেন বলে জানা গেছে।
পলাতক মন্দির কর্তৃপক্ষ
অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে মন্দির কর্তৃপক্ষ পলাতক রয়েছে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, বেআইনি আতশবাজি ফাটানোর জন্য শাতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এরপর থেকে মন্দির কর্তৃপক্ষকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার আশ্বাস
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ২ লাখ রুপি এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার রুপি করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বলে সরকারের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএনআই-কে জানিয়েছেন। আর কেরালার মুখ্যমন্ত্রী উম্মেন চণ্ডি প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি এবং প্রত্যেক আহতকে চিকিৎসার জন্য ২ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের কেরালায় আসা সম্পর্কে তিনি বলেন, ’আমরা খুশি যে তারা আমাদের কষ্ট ভাগ করে নিতে এখানে আসছেন।’ তিনি আরও জানান, মন্ত্রীসভার বিশেষ বৈঠকের পর বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি ৬ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন পেশ করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
কী ঘটেছিল ওই মন্দিরে
উল্লেখ্য, ওই মন্দিরে এক উৎসবকে ঘিরে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মন্দিরে রাতভর বাজি ফাটছিল। হঠাৎ বাজির আগুনের ফুলকি গিয়ে পড়ে মন্দির চত্বরে জমা করে রাখা আতশবাজির স্তূপে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা মন্দির ও মন্দির চত্বরে। আতঙ্কিত মানুষেরা পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। কিন্তু ততোক্ষণে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বাজির বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে মন্দিরের ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ে।
বিমানবাহিনীর চারটি হেলিকপ্টারও উদ্ধারকাজে যোগ দেয়। বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনী, পুলিশ এবং দমকল দমকল কর্মীরা কয়েক ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন বলে জানিয়েছে প্রশাসন। ধ্বংসসূপের নীচে কেউ আটকে আছেন কিনা তা খতিয়ে দেখছে উদ্ধারকারী দল।
পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে থেকে পরিস্থিতি নজরদারি করছেন। বিরোধীদলীয় নেতা ভি এস অচ্ছুতানন্দনও নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ রেখে কোল্লাম পৌঁছান। এর আগে রাজ্যের গৃহমন্ত্রী রমেশ চেন্নিলাল জানিয়েছেন, হতাহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং ওই ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে আতশবাজি সরবরাহকারী সুরেন্দ্রনের বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ তবে তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি। সূত্র: দ্য হিন্দু, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
/এসএ/বিএ/