বাংলাদেশে ‘আইএস-এর পরিচালনাকারী’ আবু ইব্রাহিম-এর সাক্ষাৎকার

দাবিক এর প্রকাশিত শেষ সংখ্যার শেষ কয়েকটি পাতা বরাদ্দ করা হয়েছে শেখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ নামের একজন কথিত বাংলাদেশির জন্য। ছাপা হয়েছে তার ৯ পৃষ্ঠার দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। দাবিক-এর দাবি অনুযায়ী আবু ইব্রাহিম এখন বাংলাদেশে আইএসের তৎপরতা পরিচালনা করছেন (পুরো সাক্ষাৎকারেই বাংলাদেশকে বেঙ্গল সম্বোধন করেছেন আবু ইব্রাহিম)। সাক্ষাৎকারে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে নিয়ে আইএসের রাজনৈতিক অবস্থান, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে আইএসের ভাবনা, বাংলাদেশে ইসলাম চর্চা, জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকা ও অঞ্চলভিত্তিক জিহাদি পরিকল্পনায় বাংলাদেশের ভৌগলিক গুরুত্বের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।

বাংলাদেশের কথিত আইএস প্রধান আবু ইব্রাহিমের সাক্ষাৎকার

আওয়ামী লীগকে ভারতপন্থী ও বিএনপিকে পাকিস্তানপন্থী আখ্যা

দাবিক-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ভারতপন্থী এবং বিএনপিকে পাকিস্তানপন্থী দল হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন আবু ইব্রাহিম। এতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকার ভারতের প্রতি অনুগত।

জামায়াতে ইসলামীর কড়া সমালোচনা

দাবিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জামায়াতে ইসলামীর কড়া সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশে আইএসের কথিত পরিচালনাকারী আবু ইব্রাহিম। তিনি দাবি করেছেন, জামায়াত নামের সংগঠনটি ইসলামের ভুল ব্যাখ্যাকারী। জামায়াত গণতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদের পক্ষে উল্লেখ করে সাক্ষাৎকারে আবু ইব্রাহিম মন্তব্য করেন, এই দুটি জিনিসই আল্লাহর আইনের বিরোধী। জামায়াতের বিরোধিতাকারী আইএসের নেতা আল-হানিফের কাছে দাবিক প্রশ্ন রাখে- সরকার তথাকথিত জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজনকে ফাঁসি দেওয়ার পর তার দলের অনুসারীরা কী শিক্ষা নিয়েছে? উত্তরে আল-হানিফ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর অনেক নেতায় আজ জেলে আছে ইরাক ও মিশরের নেতাদের মতো। আল্লাহ এই পৃথিবীতেই ধর্মচ্যুতদের শাস্তি দিয়ে থাকেন। জামায়াতে ইসলামীর তৃণমূল নেতা-কর্মীরা শিরক ছেড়ে বাংলার খিলাফতের সৈনিক হিসেবে যোগ দিচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ।’

দাবিক-এর প্রচ্ছদ

সাক্ষাৎকারে মুজিব-জিয়া প্রসঙ্গ

সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান জিয়াউর রহমানের প্রসঙ্গ। সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুকে ভারতপন্থী এবং জিয়াকে পাকিস্তানপন্থী আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্বাধীনতার পর সামরিক বাহিনীর হাতে বঙ্গবন্ধু খুন হওয়ার পর জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের আদলে দেশ পরিচালনায় তৎপর হন। তিনি সামরিক বাহিনী এবং সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর মডেল অনুযায়ী পরিচালনার চেষ্টা করেন। সাক্ষাৎকারে আবু ইব্রাহিম মন্তব্য করেন, তারপরও পাকিস্তানের আদলে বাংলাদেশে সামরিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি।    

জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে

দাবিক-এ প্রকাশিত আবু ইব্রাহিমের সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের অন্তর্ভূক্তি নিয়েও নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে আইএস। আবু ইব্রাহিম বলেছেন যে অর্থের লোভেই সামরিক বাহিনীর লোকজন জাতিসংঘের মিশনে যোগ দিচ্ছে। সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে বাংলাদেশের সাংবিধানিক পরিবর্তনের কথাও। এতে বলা হয়েছে, আইন করে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করে দেওয়ার পর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনকেই অর্থ উপার্জনের পথ বানিয়েছি সামরিক বাহিনীর লোকজন। আবু ইব্রাহিমের দাবি অনুযায়ী, টাকার কাছে তারা নিজেদের ধর্ম বিক্রি করে দিয়েছেন।

আইএসের দাবি, এরা সবাই তাদের সংগঠনের বাংলাদেশি সদস্য

বাংলাদেশে ইসলামের চর্চা নিয়ে

আবু ইব্রাহিম স্বীকার করেছেন যে বাংলাদেশের মানুষ ইসলামকে ভালোবাসে। তবে বাংলাদেশে ইসলামের চর্চা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। দাবিককে আবু ইব্রাহিম বলেন, ‘বাংলাদেশের মুসলিমরা ইসলামকে ভালোবাসলেও মুরতাদদের প্রভাবে তারা কুরআন-সুন্নাহ মেনে চলেন না।’ এজন্য জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর অজ্ঞতাকে দায়ী করেছেন আবু ইব্রাহিম। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কয়েকটি হামলা নিজেদের বলে দাবি করে আল-হানিফ বলেন, ‘কাফের, দলচ্যুত, কাদিয়ানি আর হিন্দুদের বিরুদ্ধে এসব অভিযানে চালানো হয়।’

অঞ্চলভিত্তিক জেহাদি পরিকল্পনায় বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার

সাক্ষাৎকারে অঞ্চলভিত্তিক জেহাদি পরিকল্পনায় বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব আলোচিত হয়েছে। আবু ইব্রাহিম মনে করেন ‘ভূ-রাজনৈতিক কারণ এবং ভারতের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশ বৈশ্বিক জিহাদের জন্য জরুরি এক স্থান’। আবু ইব্রাহিম মনে করেন, বাংলাদেশে জিহাদিদের একটি শক্ত ঘাঁটি তৈরী করা গেলে পশ্চিম ও পূর্ব বাংলা, দুই দিক থেকে ভারতের অভ্যন্তরে হামলা চালানো যাবে। তিনি বলেছেন, ‘এই অঞ্চলের মুসলমানরা বিশেষত বার্মার মুসলমানরা বৌদ্ধবাদ ও হিন্দুত্ববাদের ভয়াবহ নিপীড়নের শিকার।’ আবু ইব্রাহিম জানান, আইএস বাংলাদেশে জিহাদি কার্যক্রম শক্তিশালী করার পর তারা মিয়ানমারে তৎপরতা শুরু করবেন। আবু ইব্রাহিম বলেন, ‘বেঙ্গলে (বাংলাদেশে) হিন্দুদের ব্যাপক পরিমাণে নিশানা করা না গেলে সেখানে শরীয়া প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়’। সূত্র: দাবিক

/বিএ/