জয় অপহরণ ও হত্যা ষড়যন্ত্র

৩০ হাজার ডলারে এফবিআই-এর তথ্য কিনেছিলেন এক বাংলাদেশি সাংবাদিক

যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআই-এর এক এজেন্টকে বাংলাদেশি নাগরিক রিজভি আহমেদ সিজারের ঘুষ দেওয়ার মামলার রায় ও আর্গুমেন্ট পেপার থেকে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনার তথ্য প্রকাশ পায়। আর তাতে দেখা যায়, এক বাংলাদেশি সাংবাদিক ৩০ হাজার ডলারের বিনিময়ে জয়ের ব্যাপারে এফবিআই-এর তথ্য কিনেছেন। তবে ওই সাংবাদিকের পরিচয় বা নাম স্পষ্ট নয়।

noname

ওই মামলার রায়ের পর ইউএস জাস্টিস ডিপার্টমেন্টে এ সংক্রান্ত চারটি পাবলিক ডক্যুমেন্ট পাওয়া যায়। মামলায় তিন পক্ষ – রিজভি আহমেদ, জোহানেস থ্যালার ও রবার্ট লাস্টিক এর আর্গুমেন্ট পেপার এবং বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়। এর কয়েকটি ডক্যুমেন্ট বাংলা ট্রিবিউনের হাতে রয়েছে।

নথি-১

প্রাপ্ত ডক্যুমেন্ট অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা এবং তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত তথ্য পেতে এফবিআই-এর এক সদস্যকে ঘুষ দেওয়ায় ২০১৫ সালে রিজভি আহমেদকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন এক মার্কিন আদালত। তিনি এই তথ্য নেন এফবিআই এজেন্ট লাস্টিক এর কাছ থেকে। এতে মধ্যস্থতা করেন থ্যালার। শেষের দুজনকেও আদালত শাস্তি দিয়েছেন। রিজভি আহমেদ বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাসাস-এর নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের পুত্র।

দলিল অনুযায়ী দুটি কারণে রিজভি আহমেদ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যাপারে এফবিআইএর এজেন্টকে ঘুষ  দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। প্রথমত রিজভি আহমেদ  ওইসব তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন এবং দ্বিতীয়ত তিনি জয়কে অপহরণ ও শারীরিক আঘাত করতে চেয়েছিলেন। রিজভি  ৩০,০০০ ডলারে ওইসব তথ্য বাংলাদেশি একজন সাংবাদিকের কাছে বিক্রিও করেছিলেন। তবে সেই সাংবাদিকের নাম বা পরিচয় ইউএস জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের দলিলে নেই।

সংগৃহীত তথ্যের মধ্যে রয়েছে জয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত বিবরণ, তার ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর, কাস্টমস, বর্ডার পেট্রোল এজেন্সি এবং এফবিআই এর যোগাযোগ সংক্রান্ত তথ্য। এছাড়াও জয়ের ভার্জিনিয়ার বাড়ির ঠিকানা এবং আরও স্পর্শকাতর তথ্য কিছু ছিল। জয় তখন ভার্জিনিয়ায় সপরিবারে বসবাস করতেন।  

২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর লাস্টিক এবং থ্যালারের মধ্যকার ‘টেক্সট মেসেজ’ আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তারা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যক্তিগত তথ্য দিতে রিজভি আহমেদের কাছ থেকে বড় অংকের ঘুষ নিয়েছিলেন।

২০১১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১২ সালের প্রথমদিক পর্যন্ত জয়ের বিষয়ে অতিরিক্ত তথ্য এবং রিজভির এক রাজনৈতিক মিত্রকে মামলা থেকে বাঁচাতে  লাস্টিক এবং থ্যালারকে এককালীন ৪০ হাজার ডলার দেওয়া হয়। তাছাড়া প্রতি মাসে ৩০ হাজার ডলার দেওয়ার শর্তে তারা অতিরিক্ত তথ্য সরবরাহে রাজি হন। ধারণা করা হয়, সিজারের ওই রাজনৈতিক মিত্র বিএনপি-র কোনও নেতা, কিন্তু এ বিষয়ে রায়ের বিবরণ থেকে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।  

২০১২ সালের শেষ নাগাদ থ্যালার এবং লাস্টিক রিজভি আহমেদের কাছে অতিরিক্ত তথ্যের জন্য আরও অতিরিক্ত অর্থ দাবি করে। তারা জানতে পারেন, রিজভি এবং তার সহযোগীরা অপর এক এফবিআই গোয়েন্দার কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। সে সময়ে রিজভির ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে থ্যালার এবং লাস্টিক ওই তথ্য জয়ের কাছে বিক্রি করবেন বলেও পরিকল্পনা করেছিলেন। সূত্র: মার্কিন আদালতের রায়ের কপি।

/এসএ/বিএ/