X
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় গাজার ব্যস্ত ক্যাফেতে ইসরায়েলি হামলার নৃশংসতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০১ জুলাই ২০২৫, ২১:১৬আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৫, ২১:১৬

গাজা শহরের একটি জনাকীর্ণ সমুদ্রতীরবর্তী ক্যাফেতে মঙ্গলবার ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় অন্তত ২৪ জন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা এই হামলার পর রক্তাক্ত ও ভয়াবহ দৃশ্যের বর্ণনা দিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরাও রয়েছেন। এই হামলা গাজার বৃহত্তম শহুরে কেন্দ্রের পরিবেশকে মুহূর্তেই এক ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞে পরিণত হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।

গাজা সিটির বন্দরের কাছে অবস্থিত আল-বাকা ক্যাফে মঙ্গলবার দুপুরের শুরুতে প্রায় পূর্ণ ছিল যখন এটিতে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ফিলিস্তিনি ফটোসাংবাদিক ইসমাইল আবু হাতাব এবং আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত শিল্পী ফ্রান্স আল-সালমি।

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) মঙ্গলবার জানিয়েছে, তারা হামলাটি পর্যালোচনা করছে। তাদের দাবি অনুযায়ী গাজা উপত্যকার উত্তরে বেশ কয়েকজন হামাস সন্ত্রাসীকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছিল।

৬০ বছর বয়সী আবু আল-নূর জানান, তিনি দুপুরের খাবার কিনতে ক্যাফের বাইরে গিয়েছিলেন এবং ফিরে আসার সময় হামলাটি ঘটে। তিনি বলেন, আমি কাছে পৌঁছাতেই একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। চারদিকে শার্পনেল উড়ে যায় এবং ধোঁয়া ও বারুদের গন্ধে ভরে যায় স্থানটি। আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমি ক্যাফের দিকে দৌড়ে গেলাম এবং দেখলাম এটি ধ্বংস হয়ে গেছে। ভেতরে গিয়ে দেখি মেঝেতে মরদেহ পড়ে আছে। ক্যাফের সব কর্মী মারা গেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় গাজার ব্যস্ত ক্যাফেতে ইসরায়েলি হামলার নৃশংসতা

তিনি আরও বলেন, সেখানে একটি পরিবার তাদের ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ছিল। কেন তাদের নিশানা করা হলো? এটি এমন একটি জায়গা ছিল যেখানে মানুষ জীবনের চাপ থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে আসত।

এই ক্যাফে ও রেস্টুরেন্টটি ২০ মাসেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকেও টিকে ছিল এবং অবিরাম সহিংসতার মাঝে কিছুটা স্বস্তি দিতো স্থানীয়দের। ২৬ বছর বয়সী আহমদ আল-নায়ারাব কাছাকাছি সৈকতে হাঁটছিলেন।  এ সময় তিনি একটি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন। তার কথায়, ওই স্থানটিতে সবসময় অনেক লোক থাকে, যেখানে পানীয়, পরিবারের জন্য স্থান এবং ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া যায়।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, এটি ছিল একটি গণহত্যা। আমি শরীরের টুকরোগুলো চারপাশে উড়তে দেখেছি, শরীরগুলো বিকৃত ও আগুনে পোড়া ছিল। এটি ছিল একটি বীভৎস দৃশ্য। সবাই চিৎকার করছিল।

২১ বছর বয়সী অ্যাডাম কাছাকাছি কাজ করছিলেন। তিনি ছোট চেয়ার-টেবিল ভাড়া দিতেন। তিনি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, যখন হামলাটি ঘটলো, তখন শার্পনেল আমাদের ওপর পড়তে শুরু করায় আমরা মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। আমরা দৌড়াতে শুরু করি, কী হয়েছে তা বোঝার চেষ্টা করছিলাম এবং উদ্ধার প্রচেষ্টায় সাহায্য করছিলাম। যখন আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছাই, তখন দৃশ্যগুলো কল্পনারও বাইরে ছিল। আমি সেখানকার সব কর্মীকে চিনতাম। ক্যাফেটি সব বয়সী মানুষে পূর্ণ থাকতো।

অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীরা চার বছর বয়সী একটি মৃত শিশু, উভয় পা বিচ্ছিন্ন এক বয়স্ক ব্যক্তি এবং আরও অনেককে গুরুতর আহত অবস্থায় দেখার বর্ণনা দিয়েছেন। ছবিগুলোতে দেখা গেছে, ভেঙে পড়া কংক্রিটের স্তম্ভ ও ছাদের মধ্যে রক্তের ছোপ ও মাংসের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এবং একটি গভীর গর্ত ইসরায়েলের শক্তিশালী অস্ত্রের ব্যবহারের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আইডিএফের মুখপাত্র বলেছেন, হামলার আগে বিমান নজরদারির মাধ্যমে বেসামরিকদের ক্ষতির ঝুঁকি কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।

আল-শিফা হাসপাতাল জানিয়েছে, গাজা সিটিতে আরও দুটি হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া, প্রত্যক্ষদর্শী, হাসপাতাল এবং গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানা গেছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার দক্ষিণে খাবার খুঁজছিল এমন ১১ জনকে হত্যা করেছে।

অক্সফাম, সেভ দ্য চিলড্রেন এবং অ্যামনেস্টিসহ ডজনখানেক আন্তর্জাতিক দাতব্য ও বেসরকারি সংস্থা মঙ্গলবার ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি লজিস্টিকস গ্রুপ গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-কে ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর দিকে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর বারবার বিশৃঙ্খলা ও প্রাণঘাতী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

জিএইচএফ গত ২৬ মে থেকে ত্রাণ বিতরণ শুরু করে। এর আগে প্রায় তিন মাস ধরে ইসরায়েলি অবরোধ গাজার ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুযায়ী, গত এক মাসে এই বিশৃঙ্খল ও বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচির আশেপাশে ৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন জঙ্গিরা দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা শুরু করলে এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ওই হামলায় বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিকসহ প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।

জবাবে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ৫৬ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। এতে গাজার প্রায় ২৩ লাখ জনসংখ্যা বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ভূখণ্ডের বেশিরভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

 

/এএ/
সম্পর্কিত
চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ওয়াশিংটনে কোয়াড বৈঠক, প্রশ্নের মুখে ঐক্য
তীব্র তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত ইউরোপস্কুল বন্ধ ফ্রান্সে, ইতালিতে নিষিদ্ধ বাইরের কাজ
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে মরক্কোর নেপথ্য সহযোগিতা
সর্বশেষ খবর
মানুষের কাছে ভোট দেওয়ার মতো নির্ভরযোগ্য বিকল্প বিএনপি ছাড়া অন্যটি নেই: মান্না
মানুষের কাছে ভোট দেওয়ার মতো নির্ভরযোগ্য বিকল্প বিএনপি ছাড়া অন্যটি নেই: মান্না
রংপুর-৪ আসনে এনসিপির এমপি প্রার্থী হিসেবে আখতারের নাম ঘোষণা
রংপুর-৪ আসনে এনসিপির এমপি প্রার্থী হিসেবে আখতারের নাম ঘোষণা
সরকারবিরোধী বক্তব্য নয়, বিএনপির আলোচনা সভায় আত্মসমালোচনা
সরকারবিরোধী বক্তব্য নয়, বিএনপির আলোচনা সভায় আত্মসমালোচনা
শাহজালাল বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে থাকা বোয়িং বিমানে ট্রলির আঘাত
শাহজালাল বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে থাকা বোয়িং বিমানে ট্রলির আঘাত
সর্বাধিক পঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
বাংলাদেশ নিয়ে দিল্লিতে সংসদীয় প্যানেলের বৈঠকে যা আলোচনা হলো
বাংলাদেশ নিয়ে দিল্লিতে সংসদীয় প্যানেলের বৈঠকে যা আলোচনা হলো
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু