করোনা ভ্যাকসিন প্রত্যাখ্যান করছে যে দেশ

বিশ্বে করোনা মহামারি ঠেকাতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও রাষ্ট্রনেতারা যখন ভ্যাকসিনকেই সবচেয়ে কার্যকর উপায় বলে মনে করছেন তখন উল্টোপথে হাঁটছে পূর্ব আফ্রিকার দেশ তাঞ্জানিয়া। কয়েক মাস ধরেই তাঞ্জানিয়া সরকার দাবি করে আসছে, তাদের দেশ করোনামুক্ত। ফলে কোনও টিকা কর্মসূচির প্রয়োজন নেই। এমনকি করোনা পরীক্ষাও হচ্ছে একেবারে কম। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

গত বছর জুন মাসেই তাঞ্জানিয়ার প্রেসিডেন্ট জন মাগুফুলি দেশকে করোনামুক্ত ঘোষণা করেন। তিনি ও সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা মাস্ক পরার কার্যকারিতা নিয়ে মসকরা করেছেন, সন্দেহ প্রকাশ করেছেন করোনা পরীক্ষা নিয়ে। এমনকি ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রতিবেশী দেশগুলোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে ব্যঙ্গও করেছেন।

মাগুফুলি কোনও প্রমাণ হাজির না করেই করোনা ভ্যাকসিন ক্ষতিকর হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন। তিনি দেশটির নাগরিকদের আহ্বান জানিয়েছেন গরম ভাপ এবং ভেষজ ওষুধ ব্যবহারের জন্য। যা করোনা চিকিৎসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত নয়।

তাঞ্জানিয়ার প্রেসিডেন্টের করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে এমন সন্দেহের কারণ স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে সম্প্রতি তিনি বলেছেন, তাঞ্জানিয়ার মানুষদের গিনিপিগ করা হবে না।

নিজেকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দাবি করা মাগুফুলি বলেন, যদি শ্বেতাঙ্গরা করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে আসে তাহলে তারা অবশ্যই এইডস, ক্যানসার ও টিবি রোগের ভ্যাকসিনও উদ্ভাবন করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আফ্রিকা প্রধান ড. মাতিশিদিসো মোয়েতি বলেন, ভ্যাকসিন কাজ করছে এবং আমি তাঞ্জানিয়ার সরকারকে টিকা প্রদান কর্মসূচির প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

কিন্তু দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডরোথি ওয়াজিমা ভ্যাকসিন নিয়ে প্রেসিডেন্টের অবস্থানের কথাই পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব প্রক্রিয়া রয়েছে কীভাবে কোনও ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যটি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট হওয়ার পরই এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।

তিনি এ ঘোষণা দেন একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে। যেখানে দেখানো হয়, করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় আদা, পেঁয়াজ, লেবু ও মরিচ দিয়ে একটি পানীয় তৈরি করা হয়। প্রমাণ ছাড়াই দাবি করা হয়, এটি করোনার চিকিৎসায় কার্যকর।

তাঞ্জানিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের অবশ্যই নিজেদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে নজর দিতে হবে। পানি ও সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে, রুমাল ব্যবহার করতে হবে, হার্বাল ভাপ, অনুশীলন, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত পানিপান এবং প্রাকৃতিক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।

তিনি জানান, এসব পদক্ষেপ নিতে হবে দেশে ভাইরাস আছে বলে এমনটি নয়। এসব পদক্ষেপ নেওয়ার কারণ হলো প্রতিবেশী দেশগুলোতে করোনা ছড়াচ্ছে।

একাধিক চিকিৎসক তাঞ্জানিয়ার সরকারের অবস্থান নিয়ে সংশয়ী। স্থানীয় চিকিৎসকরা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, সমস্যা হলো সরকার তাঞ্জানিয়ার জনগণকে বলছে সবজির মিশ্রণ করোনাভাইরাসকে দূরে রাখতে সহায়ক।

প্রেসিডেন্ট মাগুফুলির নির্দেশ অনুসারে, তিনিসহ স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং আরও তিন জন শীর্ষ কর্মকর্তাই শুধু দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে তথ্য দিতে পারবেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে ক্যাথলিক গির্জার নেতারা তাদের নীরবতা ভেঙেছেন এবং দেশটির জনগণকে ভাইরাসের বিষয়ে সতর্ক করেছেন।