ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার নিন্দায় নীরব কেন আফ্রিকা?

ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠলেও আফ্রিকা মহাদেশের বেশিরভাগ নীরব অবস্থান নিয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার নিন্দা জানিয়ে উত্থাপিত প্রস্তাবে আফ্রিকার ৫৪টির মধ্যে ৩৫টি দেশ অনুপস্থিত ছিল। কয়েকটি দেশ অবস্থান নিয়েছে রাশিয়ার পক্ষে।

মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর একটি প্রতিবেদনে রাশিয়াকে সমর্থন বা মস্কোর নিন্দায় আফ্রিকার দেশগুলোর নীরব থাকার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মস্কোর সঙ্গে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা মস্কোর কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছে। এই সম্পর্ক শীতলযুদ্ধের সময় থেকে। ওই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ঔপনিবেশিক বিরোধী লড়াইয়ে আফ্রিকার দেশগুলোর পাশে ছিল।

এই সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও দৃঢ় হয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে আফ্রিকার মার্কিন স্বার্থ ম্রিয়মাণ হলে চীনের পাশাপাশি রাশিয়াও নিজের প্রভাব বৃদ্ধি করে। তাদের এই প্রভাব বিস্তারের মধ্যে রয়েছে কৃষি কর্মসূচি থেকে জ্বালানি কেন্দ্র স্থাপন পর্যন্ত। ২০১৯ সালে ৪৩টি দেশের প্রতিনিধিরা রাশিয়ায় একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর মতে, সাব-সাহারান আফ্রিকায় আধিপত্য বিস্তারকারী অস্ত্র রফতানিকারক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে রাশিয়া।

এই অগ্রগতি নজর এড়ায়নি। গত মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা দিনব্যাপী একটি সম্মেলনে বসেন। সেখানে তারা আফ্রিকায় রাশিয়া ও চীনের প্রভাব মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা করেন। পশ্চিমা সামরিক ও বেসামরিক নেতারা আফ্রিকা মহাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিকে পশ্চিমের জন্য দীর্ঘমেয়াদি হুমকি ভাবতে শুরু করেছেন। মস্কোর প্রতি সমর্থন প্রকাশ করা কয়েকটি দেশের ওপর নজর রাখছে চীনও।

ইউক্রেন যুদ্ধে আফ্রিকা মহাদেশের বেশিরভাগ দেশের পক্ষ থেকে রাশিয়ার নিন্দা জানানোর বিপরীত স্রোতে অবস্থান নিয়েছে কেনিয়া ও ঘানা। কিন্তু মহাদেশের বাকি দেশগুলো শুধু যে রাশিয়ার নিন্দা জানানো থেকে বিরত থাকছে তা নয়, কিছু কিছু দেশে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উদযাপন করা হচ্ছে।

ইউক্রেনে যুদ্ধ তীব্র হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস দল কেপটাউনে রুশ দূতাবাসে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। রাশিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৩০ বছর পূর্তির জন্য এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকার বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা জানান, এতে রাশিয়ার সঙ্গে অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ তুলে ধরতে ব্যর্থ হওয়ার ভোট দেয়নি তার দেশ। তিনিও পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণের নিন্দা জানিয়েছেন।

ভোটদানে বিরত ছিল জিম্বাবুয়ে। যে দেশটি এর আগে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা থেকে রক্ষা পায়। আর তা সম্ভব হয়েছিল চীন ও রাশিয়ার ভেটোর কারণে। দেশটির প্রেসিডেন্ট রাশিয়া ও চীনকে নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে প্রশংসা করেছেন।

উগান্ডাকে নিয়মিত সামরিক সরঞ্জাম মেরামতে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। সম্প্রতি দেশটি ঘোষণা দিয়েছে, তারা সহিংস অপরাধ দমনে যানবাহনে ট্র্যাকিং ডিভাইস বসানোর জন্য একটি রুশ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে। দেশটি শীতল যুদ্ধের সময়ে গঠিত জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের পরবর্তী চেয়ার হতে যাচ্ছে। এতে ১২০টি সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে। আফ্রিকা মহাদেশের প্রায় সব দেশ এই জোটে আছে।

সূত্র: এপি