দেশ পরিচিতি: টোগো

আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত সংকীর্ণ একটি টোগো। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাজনীতির কারণে দীর্ঘকাল ধরে সমালোচিত হয়ে আসছে দেশটি।

১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর অর্থনীতিকে স্থিতিশীল অবস্থায় আনতে বেশ কাঠখড় পুড়িয়েছে দেশটি।

ফসফেট উৎপাদনে বিশ্বের প্রথম সারির ৫ দেশের মধ্যে অবস্থান করছে টোগো। মূলত সার হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হয় ফসফেট। এর পরেও দারিদ্রের সঙ্গে লড়ছে দেশটি। দেশটির অর্থনীতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।

 

টোগো সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • রাষ্ট্রীয় নাম: টোগোলীয় প্রজাতন্ত্র
  • রাজধানী: লোমে
  • আয়তন: ৫৬ হাজার ৭৮৫ কিলোমিটার
  • জনসংখ্যা: ৮৬ লাখ ৪৫ হাজার
  • ভাষা: ফরাসি
  • গড় আয়ু: ৬০ বছর (পুরুষ), ৬১ বছর (নারী)

 

নেতৃত্ব

প্রেসিডেন্ট ফাউরে নাসিংবে এয়াদেমা। ছবি: রয়টার্স

প্রেসিডেন্ট ফাউরে নাসিংবে এয়াদেমা

বাবার মৃত্যুর পর ২০০৫ সালে প্রেসিডেন্ট হন ফাউরে। মৃত্যুর আগে কঠোর হাতে ৩৮ বছর নিজ হাতে ক্ষমতা ধরে রাখেন তার বাবা নাসিংবে এয়াদেমা।

সামরিক শাসনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন ফাউরে নাসিংবে। কিন্তু তীব্র অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নির্বাচন আয়োজন করতে বাধ্য হন তিনি। নির্বাচনে তার বিজয় নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করায় শতাধিক মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছিল।

এছাড়া আরও তিনটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এখনও ক্ষমতায় আছেন তিনি। নির্বাচনগুলোর প্রত্যেকটিই বিরোধী দলের দ্বারা সমালোচিত।

২০১৯ সালে সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার পথ সুগম করেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭-১৮ সালে চরম আন্দোলন হয় দেশটিতে।

 

সংবাদমাধ্যম

দেশটিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম রেডিও, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। টোগোর মূল টেলিভিশন চ্যানেল হলো সরকারি মালিকানাধীন টোগোলাইজ। দেশটির টোগো প্রেস ডেইলিও সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন।

তবে বেসরকারি মিডিয়াও বেশ প্রসার লাভ করেছে। দেশটিতে বেশ কিছু বেসরকারি সাপ্তাহিক সাময়িকী, দৈনিক পত্রিকা, টিভি চ্যানেল ও রেডিও স্টেশন চালু আছে।

সংবাদমাধ্যমের ভুলকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে ২০১৫ সালে পেনাল কোড জারি করে দেশটির সরকার। মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করে ২০১৪ সালে জারি হয় এই আইন।

সাগরতীরের একটি গ্রাম। ছবি: রয়টার্স

টোগোর ইতিহাসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

১৫-১৭ শতক: কওয়া ও ভল্টাইক জনগোষ্ঠীর দখলকৃত অঞ্চলটিতে নাইজেরিয়া, ঘানা ও আইভরি কোস্ট থেকে ইউ এবং এন সম্প্রদায় বসতি স্থাপন করে। ১৭০০-এর দশকে অঞ্চলটি ডেনমার্কের অধীনে ছিল।

১৮৮৪: টোগোল্যান্ডে জার্মান শাসন শুরু হয়। ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ ও ফরাসিদের কাছে হেরে যায় জার্মানরা। ১৯২২ সালে দেশটির পশ্চিম অংশ ব্রিটেনের দখলে চলে যায়। একই সঙ্গে দেশটির পূর্ব অংশ ফ্রান্সের অধীনে চলে যায়।

১৯৬০: ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি।

১৯৬৭: রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন নাসিংবে এয়াদেমা। রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।

১৯৯২: নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। ১৯৯৩ সালে সরকার বিলীন করেন প্রেসিডেন্ট এয়াদেমা। ফলে দেশটিতে বিদ্রোহ দানা বেঁধে ওঠে। হাজার হাজার মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পালিয়ে যায়।

২০০৫: ৬৯ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট এয়াদেমা মারা যান। তার ছেলে ফাউরে এয়াদেমা দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হন।

২০২২: কমনওয়েলতে যোগ দেয় টোগো।

সূত্র: বিবিসি