যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন আরও ৩৬টি দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তাভাবনা করছে। এদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র মিসর ও জিবুতির মতো দেশও। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এক গোপন কূটনৈতিক স্মারক পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানিয়েছে।
শনিবার স্বাক্ষরিত এ গোপন স্মারকপত্রে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তালিকাভুক্ত দেশগুলোকে ৬০ দিনের মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নির্ধারিত নতুন মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। ব্যর্থ হলে এসব দেশের নাগরিকদের ওপর পূর্ণ বা আংশিক ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।
স্মারকে বলা হয়েছে, কিছু দেশ বিশ্বাসযোগ্য পরিচয়পত্র দেওয়ার মতো যোগ্য ও সহযোগী কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ গঠন করতে পারেনি। আবার কিছু দেশের বেশি সংখ্যক নাগরিক ভিসার শর্ত ভেঙে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
স্মারকে বলা হয়েছে, ২৫টি আফ্রিকান দেশ, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে- অ্যাঙ্গোলা, বেনিন, বুরকিনা ফাসো, কাবো ভার্দে, ক্যামেরুন, কোট দিভোয়ার, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, জিবুতি, ইথিওপিয়া, মিসর, গ্যাবন, গাম্বিয়া, ঘানা, লাইবেরিয়া, মালাউই, মৌরিতানিয়া, নাইজার, নাইজেরিয়া, সাও টোম ও প্রিন্সিপে, সেনেগাল, দক্ষিণ সুদান, তানজানিয়া, উগান্ডা, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে।
ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলো হলো: অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, ডোমিনিকা, সেন্ট কিটস ও নেভিস এবং সেন্ট লুসিয়া।
এছাড়া এশিয়ার চারটি দেশ হলো ভুটান, কম্বোডিয়া, কিরগিজস্তান ও সিরিয়া এবং ওশেনিয়ার তিনটি দেশ হলো টোঙ্গা, তুভালু ও ভানুয়াতু এই নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে।
স্মারকে উল্লেখ করা হয়েছে, যদি কোনও দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো তৃতীয় দেশের নাগরিকদের গ্রহণে সম্মত হয় অথবা নিরাপদ তৃতীয় দেশ চুক্তিতে অংশ নেয়, তবে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হতে পারে।
তালিকাভুক্ত দেশগুলোকে আগামী বুধবার সকাল ৮টার (যুক্তরাষ্ট্র সময়) মধ্যে একটি প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে বোঝা যায় তারা কীভাবে নতুন নিয়ম মেনে চলবে।
এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে নেওয়া হলো যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সদ্য তার প্রথম প্রশাসনের সময়কার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আবারও চালু করেছেন। সেই আদেশে ১২টি দেশের নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং আরও সাতটি দেশের জন্য আংশিক নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়েছে।
চলতি জানুয়ারিতেই ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে পররাষ্ট্র দফতরকে নির্দেশ দেন যে, যেসব দেশের ভিসার যাচাই ও তথ্য যাচাই ব্যবস্থা এতটাই দুর্বল যে তা ভিসা স্থগিতের কারণ হতে পারে তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে।
এই নিষেধাজ্ঞাগুলো ট্রাম্পের বৃহত্তর অভিবাসন পরিকল্পনার অংশ। এর মধ্যে রয়েছে তার কথিত যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণবিতাড়ন অভিযান, ভিসা বাতিল এবং হাজার হাজার অভিবাসীর সুরক্ষা বাতিল করা।
এই খসড়া নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এখনও হোয়াইট হাউজ বা পররাষ্ট্র দফতর কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র বলেন, মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বিদেশিদের আইনের আওতায় রাখা নিশ্চিত করতে আমরা সবসময় আমাদের নীতি পুনর্মূল্যায়ন করি।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি