আনুষ্ঠানিকভাবে চীনে আটক নাগরিকদের মুক্তি দাবি করল কানাডা

গত শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) প্রথমবারের মতো কানাডা আনুষ্ঠানিকভাবে চীনে আটক তার দুই নাগরিকের মুক্তি দাবি করেছে। চীনের কাছে মুক্তি দাবি করা আর টেবিলে অনর্থক মাথা ঠোকা একই কথা, এরকম মন্তব্য করায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো প্রবল সমালোচনার স্বীকার হন। তার ফলশ্রুতিতে অবস্থান পরিবর্তন করল কানাডার সরকার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশটির এক শীর্ষ কর্মকর্তা কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে জানিয়েছেন,পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড কানাডায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আটক কানাডীয়দের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কানাডার সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছে।s4.reutersmedia.net

গত ১ ডিসেম্বর কানাডার ভ্যানকুভারে আটক হন চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের সিএফও এবং এর প্রতিষ্ঠাতার মেয়ে মেং ওয়ানঝু। ইরানের বিরুদ্ধে থাকা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে তাকে আটক করা হয়। এই আটকের জন্য কানাডাকে চরম মূল্য দিতে হবে বলে ওই সময়ে সতর্কতা দেয় চীন।

ওয়ানঝুর আটকের ৯ দিন পর চীনে আটক হন কানাডার সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইকেল কোভরিগ এবং কানাডীয় ব্যবসায়ী মাইকেল স্পাভোর। ওয়ানঝুকে গ্রেফতারের প্রতিক্রিয়ায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে কি না চীন সে বিষয়ে কিছু বলেনি। তবে প্রশ্নের মুখে পড়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ওয়ানঝুর মানবাধিকার রক্ষিত হচ্ছে কি না তা নিয়ে।

শুক্রবার কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেছেন, ‘চলতি মাসের শুরুতে দুই কানাডীয় নাগরিককে বিচারবহির্ভূতভাবে চীনে আটক করা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা তাদের দ্রুত মুক্তি দাবি করছি।’ আল জাজিরা লিখেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রিল্যান্ডের এই বিবৃতির মাধ্যমে কানাডার তুলনামূলকভাবে কঠোর অবস্থান প্রকাশ পেল।

গত বুধবার কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের কারণে বিরোধী রাজনীতিবিদরা প্রবল সমালোচনা করেছিলেন। কানাডার পক্ষ থেকে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলার যে দাবি উঠেছিল তার বিরোধিতা করেছিলেন ট্রুডো। তার ভাষ্য ছিল, আটক কানাডীয়দের মুক্তির দাবি নিয়ে নিয়ে চীনের কাছে গিয়ে কোনও লাভ হবে না। টেবিলে মাথা ঠোকা হবে, কিন্তু ফল আসবে না। শেষ পর্যন্ত অবস্থান বদল করতে হলো ট্রুডোর সরকারকে।

কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রিল্যান্ড জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে থাকা প্রত্যর্পণ চুক্তি মেনে চলার বাধ্যবাধকতার কারণেই হুয়াওয়ের কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করতে হয়েছে। কিন্তু তাকে আইনগত সব সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তার মামলায় স্বচ্ছ বিচারিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির কারণেই কানাডাকে যে চীনা নাগরিক ওয়ানঝুকে আটক করতে হয়েছে তা স্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবার্ট পালাডিনো আটক কানাডীয় নাগরিকদের আশু মুক্তি দাবি করেছেন।

যুক্তরাজ্যও পাশে দাঁড়িয়েছে কানাডার। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, মার্কিন চুক্তির শর্ত মানতে গিয়েই চীনা নাগরিককে আটক করতে হয়েছে কানাডার। কিন্তু চীন ‘রাজনৈতিক কারণে ’ দুই কানাডীয় নাগরিককে আটক করেছে। এতে যুক্তরাজ্য ‘গভীরভাবে চিন্তিত।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও কোভরিগ ও স্পাভোরের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।