ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের বিশ্লেষণ

জাকার্তার নতুন উদ্বেগ: রাজনীতির নির্ধারক ভূমিকায় ইসলামপন্থীরা

8888ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় চলছে গভর্নর নির্বাচন। এর মাঝেই সফরে এসেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। এই নির্বাচন দেশটির জাতীয় রাজনীতি ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর উপর নির্ভর করছে দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।

জাকার্তার গভর্নর নির্বাচন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডোরর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করছেন বাসুকি জাহাজা পুর্নামা, যিনি একজন খ্রিস্টান ধর্মালম্বী ও চীনা বংশোদ্ভূত। স্পষ্টভাষী ও অমার্জিত বলেও খ্যাতি রয়েছে পুর্নামার। তার বিপক্ষে এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন আনিস বাসওয়েদান। ইসলামি দলগুলো মুসলিম এই প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন। বুধবার পর্যন্ত অর্ধেক ভোট গণনায় দেখা গেছে, আনিস ১৪ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন। হারের শঙ্কায় রয়েছেন পুর্নামা।

অথচ দুর্নীতিবিরোধী কাজ করে অনেক প্রশংসিত হয়েছেন পুর্নামা। শহরের অনেক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার ইসলামি দলগুলো তার বিপক্ষে র‌্যালি বের করে এবং একটা সময় সহিংস হয়ে উঠে।

গত নভেম্বরে এ সংকট শুরু হয়। ইসলামি দলগুলো পুর্নামার বিরুদ্ধে একটি ভিডিও তৈরি করে যেখানে কোরআন নিয়ে তার কিছু বক্তব্য তুলে ধরা হয়। সেই বক্তব্যগুলোতে মনে হচ্ছিলো তিনি কোরআনকে আক্রমণ করে কথা বলছেন। তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলাও হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে প্রেসিডেন্টও এই মামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

যত দ্রুত নির্বাচনে ইন্দোনেশিয়ার রাজনৈতিক পটভূমি ইসলামপন্থীরা পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন তা মনে করিয়ে দেয় যে, ইন্দোনেশিয়ার গণতন্ত্র এখনও নতুন ও ভঙ্গুর। ইন্দোনেশিয়ার ভোটারদের মধ্যে এই পরিবর্তন আসলে বিশ্বাসের পরিবর্তনের চেয়ে দুটি রাজনৈতিক দলের লড়াই বড় করে সামনে এনেছে। নিজেদের ‍উদ্দেশ্যে হাসিলে মৌলবাদী দলগুলো এই কাজ করছে।

আনিস বাসওয়েদানকে আগে আধুনিক মুসলিম মনে করা হতো। বর্তমান প্রেসিডেন্টের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনে ২০১৬ সালে দায়িত্ব ছাড়েন তিনি। তবে তার অব্যাহতির কারণে উইডোডো ২০১৯ সালের নির্বাচনে মুসলিমদের সমর্থন হারানোর আশঙ্কা করেছিলেন। ফলে ইন্দোনেশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দল মুহাম্মদিয়াহ দলের একজনকে আনিসের স্থলাভিষিক্ত করেন প্রেসিডেন্ট।

এরপর প্রগতিশীল জেরিন্দ্রা দলে যোগ দেন আনিস। ইন্দোনেশিয়ার স্বৈরাচার নেতা সুহার্তোর জামাতা এই দল চালান। ইসলামপন্থীরা পুর্নামার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করার পর আনিস নিজেকে রক্ষণশীল মুসলিম ধর্মীয় নেতা হিসেবে হাজির করতে থাকেন। জানুয়ারিতে কট্টরপন্থী ইসলামিক ডিফেন্ডারস ফ্রন্টের এক সমাবেশে দেওয়া ভাষণে আনিস দাবি করেন, অমুসলিমদের ভোট দিতে কোরআনে নিষেধ করা হয়েছে।

এই সুবিধাবাদ অবশ্য আনিসের জন্যও বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ তার আধুনিক ও সংস্কারবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নতুন ইসলামি মিত্রের অনেকেই মেনে নিতে পারবে না। অন্যদিকে গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৯ সালে জেনারেল প্রাবোর পক্ষে কাজ করে সমর্থন আদায়ের চাপ থাকবে আনিসের ওপর। কারণ এই নির্বাচনে জেনারেল প্রাবো আনিসকে সমর্থন দিয়েছেন।  এ বিষয়টি জাকার্তায় খুব একটা জনপ্রিয় হওয়ার সুযোগ নাই।

এতে অবশ্য ইন্দোনেশীয়দের আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। কারণ জাকার্তাই দেশটির জাতীয় রাজনীতির গতিপথ অনেক সময়ই ঠিক করে দেয়। একসময় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘোষণা এবং গির্জা জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া ইসলামপন্থীরাই এখন রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণকারী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।  জাকার্তার গভর্নর নির্বাচন দেখিয়ে দেয় যে, আনিসের মতো প্রগতিশীল মুসলিম প্রার্থীরা হয়তো ধর্মকে কেন্দ্র করে সাময়িক বিজয় নিশ্চিত করতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে।

/এমএইচ/এএ/