মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে ইসরায়েল

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর সহিংস নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘের মতে, সোমবার পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজার রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। নো-ম্যানস ল্যান্ডে আটকা আছেন আরও কয়েক হাজার। রোহিঙ্গাদের গ্রাম অব্যাহতভাবে পুড়িয়ে চলেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এসব ঘটনার পরও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কাছে অস্ত্র বিক্রি করে চলেছে। মানবাধিকার কর্মীদের দাবির পরও মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদেরক কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরায়েল।

3569764612

ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম হারেৎজ লিখেছে, দেশটির সরকার মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে। দেশটির রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে অস্ত্র সহযোগিতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে কি না তা জানা যায়নি। তবে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিরি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, রাখাইনে হত্যাযজ্ঞ চলছে এবং ইসরায়েল সরকার মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সামরিক জান্তাদের এক প্রধান জেনারেল মিন অং লাইং ইসরায়েল সফর করেছেন। কেনাকাটার এই সফরে তিনি ইসরায়েলের সামরিক কারখানা পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধি দল নিয়ে তিনি ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ইসরায়েলের সেনা প্রধানের সঙ্গেও তিনি বৈঠক করেন। জেনারেল লাইং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এলবিট সিস্টেমস ও এলটা সিস্টেমস এবং সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শন করেন।

২০১৬ সালের আগস্ট মাসে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর সামরিক প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান টার আইডিয়াল কনসেপ্টস এর ওয়েবসাইটে একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। ছবিটি ছিল ইসরায়েলের নির্মিত কর্নার শট রাইফেলস হাতে প্রশিক্ষণের। ছবির সঙ্গে ছিল এক বিবৃতি যাতে উল্লেখ করা হয়েছে মিয়ানমার অভিযানে এই সব অস্ত্রের ব্যবহার শুরু করেছে।

ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, কোম্পানিটির প্রধান সাবেক ইসরায়েলি পুলিশ কমিশনার শ্লোমো আহারনিশকি। তবে এখন আর ওয়েবসাইটটি কোথাও মিয়ানমারের কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে না, শুধু এশিয়া ব্যবহার করা হয়।

3796962082

চলতি সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ইসরায়েলের হাইকোর্টে মিয়ানমারের কাছে অব্যাহত অস্ত্র বিক্রির বিরোধিতা করে মানবাধিকারকর্মীদের এক আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। মার্চ মাসে প্রাথমিক শুনানিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণলায় যুক্তি তুলে ধরে জানায়, এই বিষয়ে আদালতের কিছু করার নাই, বিষয়টি পুরোপুরি কূটনৈতিক।

৫ জুন ইসরায়েলের সংসদে মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি বিষয়ে নিসেট সদস্য তামার জ্যান্ডবার্গের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী আবিগডর লিয়েবারম্যান জানান, ইসরায়েল আলোকিত বিশ্বকে (পশ্চিমা দেশ) অনুসরণ করে।  প্রথমত বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র রফতানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে। ইসরায়েল নিজেদের যুক্তরাষ্ট্রের অনুগামী এবং একই নীতি অনুসরণ করে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, নিসেট প্লেনাম এই ধরনের বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার ক্ষেত্র নয় এবং ইসরায়েল আলোকিত বিশ্বের জারি করা সব নির্দেশনা অনুসরণ করে।

হারেৎজ লিখেছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্য সঠিক নয়। মিয়ানমারের কাছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফলে লিয়েবারম্যানের বক্তব্য অজ্ঞতা না কি ইসরায়েলের অস্ত্র রফতানির বিষয়ে পুরোপুরি অবগত নন (যদিও তিনিই অস্ত্র বিক্রি অনুমোদন করেন) কিংবা চোখে ধূলো দেওয়ার কোনও চেষ্টা, তা স্পষ্ট নয়।

ইতিহাস অনুসারেও লিয়েবারম্যানের দাবি সঠিক নয়। আর্জেন্টিনায় যুদ্ধাপরাধে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়েছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকার সময় ইসরায়েল আর্জেন্টিনাকে অস্ত্র দিয়েছে। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও ইসরায়েল সার্বিয়ার সেনাদের অস্ত্র দিয়েছে। যেসব অস্ত্র দিয়ে বসনিয়ায় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। সূত্র: হারেৎজ।