সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে সেই ‘সিরিয়াল কিলার’কে খুঁজছে পুলিশ

এক নতুন সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করে পাঞ্জাব পুলিশ দাবি করেছে, ওই ফুটেজে থাকা দাড়িওয়ালা ব্যক্তিকেই জয়নাব হত্যার সন্দেহভাজন বিবেচনা করছে তারা। ওই দাড়িওয়ালা ব্যক্তিকে ‘পার্সন অব ইন্টারেস্ট’ বিবেচনা করে তার খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ। এর আগে ময়না তদন্তের ভিত্তিতে পাঞ্জাব কর্তৃপক্ষ জয়নাবের সন্দেহভাজন খুনিকে একজন ‘সিরিয়াল কিলার’ হিসেবে শনাক্ত করে। তাদের দাবি, জয়নাবকে ধর্ষণের পর হত্যার মতো এক বছরে সংঘটিত ১০টি ঘটনার মধ্যে ৮টির হোতা সে। পুলিশি অবহেলার অভিযোগ করে দোষীদের বিচারের দাবিতে এখন গোটা পাকিস্তান সোচ্চার। এমন অবস্থায় অচিরেই সন্দেহভাজনকে গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।

9RH7OFuS-320

জয়নাবসহ ৮ শিশু হত্যার সঙ্গে এক সিরিয়াল কিলারের যোগসূত্র পাওয়ার পর সন্দেহভাজন ওই খুনির স্কেচ প্রকাশ করেছে পাঞ্জাব পুলিশ। শুক্রবার ওই স্কেচ প্রকাশ করা হয় বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল। পাঞ্জাব সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন ২০জনকে আটক করেছেন তারা। তবে তাদের কাছ থেকে এখনও কোন ক্লু খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রাদেশিক সরকারের মুখ্যমন্ত্রী শাহাবাজ শরিফ জয়নাবের হত্যাকারীদের ধরিয়ে দিতে এক কোটি রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেন।

পুলিশের একটি নথি পাওয়ার সূত্রে বিবিসি জানিয়েছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে এই পর্যন্ত কাসুরে দশটি একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার শিকার হওয়াদের মধ্যে জয়নাবসহ ছয়জনের দেহে একই ডিএনএ পাওয়া গেছে। বিবিসি ৬ হত্যাকাণ্ডে এক ব্যক্তির সংযোগের কথা বললেও পাকিস্তানের জিও টিভি পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিদর্শক আরিফ নওয়াজ খানকে উদ্ধৃত করে বলছে, ওই ব্যক্তি আসলে ৮টি হত্যাকাণ্ডে জড়িত। জিও নিউজকে তিনি বলেছেন, ‘ডিএনএ পরীক্ষায় একটা বিষয় খুবই পরিষ্কার যে, আগের সাতটি ঘটনার পর এটা আট নম্বর ঘটনা যাতে একই অপরাধী এমন ভয়ংকর অপরাধ করেছে।’  

আরিফ নওয়াজ জানান, প্রায় ২২৭ জনকে তদন্ত আর সন্দেহভাজন ৬৭ জনের ডিএনএ পরীক্ষা করেছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন কারও সঙ্গেই ওই ডিএনএ’র মিল পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, নিম্নমানের ছবির কারণে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করা কঠিন। সিসিটিভি ফুটেজের রেজুলেশন খুব পরিষ্কার নয়। আমরা রেজুলেশন বাড়িয়েছি কিন্তু তারপরও তা শত ভাগ শনাক্তযোগ্য নয়। আমরা আবারও তা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’

তদন্ত প্রচেষ্টায় সফলতা পেয়ে শনিবার এই ঘটনায় নতুন একটি সিসিটিভি ভিডিও প্রকাশ করেছে পাঞ্জাব পুলিশ। নতুন ওই ফুটেজে একজন দাড়িওয়ালা লোককে জয়নাবের বাড়ির সামনে সন্দেজহনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। ধূসর রঙের পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত ওই ব্যক্তির গায়ে ছিল বাদামি জ্যাকেট। কালো রংয়ের টুপি ছিল মাথায়। পুলিশ পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, এই ব্যক্তিকেই এখন পর্যন্ত ‘পারসন অব ইন্টারেস্ট’ বিবেচনা করছেন তারা।

পাঞ্জাব সরকারের মুখপাত্র মালিক আহমেদ খানও শুক্রবার বলেছেন, ‘জয়নাব হত্যা মামলার সন্দেহভাজন একজন সিরিয়াল কিলার। সে বাচ্চা মেয়েদের অপহরণ করে ও হত্যা করে।’ পাকিস্তানের শামা টিভির খবরে বলা হয়েছে, পাঞ্জাব প্রদেশিক সরকারের বিশ্বাস এই ঘটনায় কোনও ‘সিরিয়াল রেপিস্ট’ জড়িত। জয়নাবের পোস্ট মর্টেম রিপোর্টের বরাত দিয়ে ওই খবরে বলা হয়, তার হাইমেন (যোনী পর্দা) ছেঁড়া ছিল। এছাড়া নাক আর ঘাড়ে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, জয়নাবকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া হত্যার আগে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, তার গলার কাছের হাড় ভাঙা ছিল। যাতে প্রমাণ হয় তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে।

জয়নাবের ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক কেরাতুলিয়ান আতিক পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনকে জানিয়েছেন, জয়নাবের মৃতদেহ পাওয়ার দু্ই থেকে তিন দিন আগে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে যৌন নির্যাতনেরও প্রমাণ পাওয়া গেছে।