মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শিবির ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’: আরসা

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য মিয়ানমারের অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পকে ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’ বলে আখ্যা দিয়েছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

আরসা`র লোগো

টুইটারে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন আরসা বলেছে, প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ আর ‘বার্মিজ সন্ত্রাসী সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তথাকথিত অস্থায়ী ক্যাম্পে রাখার মিথ্যা ও প্রতারণামূলক আশ্বাস দিচ্ছে।’ উল্লেখ্য, মিয়ানমারের আগের নাম বার্মা।

শনিবার প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা কখনোই তাদের পৈতিৃক ভূমি ও গ্রামে ফিরে যেতে পারবে না। বরং তাদের নিজেদের বাকি জীবনের সঙ্গে এসব কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে জন্ম নেওয়া পরবর্তী প্রজন্মকেও ওই ক্যাম্পেই পার করতে হবে।’

মিয়ানমার বলেছে, তারা ৩০ হাজার প্রত্যাবাসনকারীর জন্য একটি ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরি করবে। নিজ বাড়ি বা আশেপাশে পুনর্বাসিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের সেখানেই অবস্থান করবে। তবে আরসা’র ওই বিবৃতির জবাবে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জো হতাই।

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার মিয়ানমার মুখপাত্র পল ভিরিজি সতর্ক করে বলেছেন, ‘শরণার্থীদের সম্মতি বা স্থায়ী সমাধানের উপায় ছাড়া প্রত্যাবাসনকারীদের কোনোভাবেই বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসা ঠিক হবে না।’ তিনি রয়টার্সকে বলেন,  ‘শরণার্থীদের নিজ ভূমিতে নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে ও সংকটের মূল কারণ সমাধান করতে এসব পদক্ষেপ নিতে হবে।’

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় শরণার্থী শিবির পরিচালনায় সহায়তাকারী ইউএনএইচসিআর জড়িত নয়।

এর আগে গত ৭ জানুয়ারি এক টুইট বার্তায় রাখাইনে একটি সামরিক ট্রাকে চালানো হামলার দায় স্বীকার করে আরসা। টুইট বার্তায় বলা হয়, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্য মিয়ানমারের সরকারের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা ছাড়া কোনও বিকল্প নেই।’ বিবৃতিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য ‘মানবিক চাহিদা ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ’ নিয়ে আলোচনা করার আহ্বানও জানানো হয়।

গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি পুলিশ ক্যাম্পে সমন্বিত হামলার পর রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে অভিযানের নামে হত্যা, ধর্ষণ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন চালাতে থাকে সামরিক বাহিনী। এর পরের তিন মাসে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানে বর্বরোচিত নির্যাতনের বিবরণ। জাতিসংঘসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো একে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছে। ২৫ আগস্টের ওই হামলায় আরসা জড়িত ছিল বলে অভিযোগ করে আসছে মিয়ানমার।