‘একই ভাষা ও সংস্কৃতির’ হিন্দুদের হত্যা করার অভিযোগ অস্বীকার আরসার

রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি’ (আরসা) তাদের বিরুদ্ধে আনা হিন্দু হত্যার অভিযোগ নাকচ করে শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছে। কয়েকদিন আগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছিল, রোহিঙ্গাদের হাতে মিয়ানমারের হিন্দুরা প্রাণ হারিয়েছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ‘ক্রাইসিস রেসপন্স ডিরেক্টর’ তিরানা হাসান বলেছেন, তারা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্যের সত্যতার বিষয়ে নিঃসন্দেহ। অন্যদিকে আরসার বিবৃতিতে বলা হয়েছে হয়েছে, ‘একই ভাষা ও সংস্কৃতির’ হিন্দু সম্প্রদায়ের কাউকে হত্যা বা জখম করা যেকোনও রোহিঙ্গার জন্য অযৌক্তিক।Untitled-1

আরসা সদস্যদের বিরুদ্ধে রাখাইনের দুটি গ্রামে অন্তত ৯৯ জন হিন্দু রোহিঙ্গাকে হত্যার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাখাইনে হিন্দুদের গণকবর আবিষ্কার করার দাবি করেছিল মিয়ানমার। ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য তারা তখন আরসাকে দায়ী করেছিল। ৪ মাস ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা সংগঠনটি সে সময় এই অভিযোগ অস্বীকার করে। অ্যামনেস্টি বলেছে, আরসার আতঙ্কজনক এই আক্রমণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞকে সার্বিকভাবে অনুসরণ করেছে। সেনাবাহিনীর অভিযানের প্রথম দিকে বিভিন্ন মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে এলেও গত ৩১ জানুয়ারির পর থেকে রহস্যজনকভাবে নীরব রয়েছে আরসা নামের সংগঠনটি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছিল, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ও রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গারা তাদের নিশ্চিত করেছে, উত্তরাঞ্চলীয় মংডু শহরের আশপাশের গ্রামে হিন্দু জনগোষ্ঠীর মানুষকে হত্যা করেছে আরসা। পুলিশি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার দিনগুলোতেই এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় স্বল্প পরিসরে হলেও বেসামরিক নাগরিকদের হত্যায় জড়িত সংগঠনটি।

অ্যামনেস্টির দেওয়া তথ্যের প্রতিবাদ করে সংগঠনটির নেতা আতা উল্লাহ স্বাক্ষরিত বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়েছে আরসার টুইটার অ্যাকাউন্টে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেদনে উল্লেখিত সব অযৌক্তিক ও গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আমরা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করছি। আমরা এমন কি রোহিঙ্গাদের হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে অংশ নেওয়া রাখাইন সন্ত্রাসীদেরও আক্রমণ করিনি। সেখানে আরাকানের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালাবার কোনও প্রসঙ্গই আসতে পারে না। যেকোনও রোহিঙ্গার জন্য কোনও হিন্দুকে আক্রমণ করা বা মেরে ফেলা অযৌক্তিক।’

বিবৃতিতে মিয়ানমারের হিন্দুদের একই ভাষাভাষী ও একই সংস্কৃতির অনুসারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আরসার দাবি, মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করতে আরাকানের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক বা ধর্মীয় সংঘাত হিসেবে দেখাবার প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে।

আরসার দাবি, ‘এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হলো সেই ঘটনাটি যেখানে দেখা গেছে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সরকার ও মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সেনাবাহিনী কয়েকজন হিন্দুকে রোহিঙ্গাদের বাসতবাড়িতে আগুন দিতে বাধ্য করেছে। পরে তারাই প্রচার করেছে, রোহিঙ্গারা নিজেরাই নিজেদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’