রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ভাষা নিয়ে রয়টার্সের পর্যবেক্ষণ

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের তিনজন সামরিক কর্মকর্তা ও দুইটি সেনা ব্রিগেডের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছেন বর্ডার পুলিশের একজন কর্মকর্তাও। নিষেধাজ্ঞার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পত্তি জব্দ করা হবে। তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমেরিকার নাগরিকদের আর্থিক লেনদেনও নিষিদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপকে রোহিঙ্গা নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া সবচেয়ে কড়া পদক্ষেপ আখ্যায়িত করলেও বার্তাসংস্থা রয়টার্স এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণায় ব্যবহৃত ভাষায় গভীর তাৎপর্য লক্ষ্য করেছে। ১৭ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে রয়টার্স লিখেছে, শুক্রবারে ঘোষিত নিষেধাজ্ঞায় রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো সহিংসতাকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ (ক্রাইম এগেইন্সট হিউম্যানিটি) বা ‘গণহত্যা’ (জেনোসাইড) হিসেবে আখ্যায়িত করেনি যুক্তরাষ্ট্র।সু চি ও সেনা

রোহিঙ্গাদের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কতটা জোরালো তা জানা যাবে আগস্টের ২৫ তারিখ বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মার্কিন প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করলে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী ২৫ আগস্ট মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে মার্কিন তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। পম্পেও প্রকাশিতব্য ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ঠিক করবেন রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো সহিংসতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বা গণহত্যা বলবেন কি না।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা গণহত্যার মতো অভিধা ব্যবহার করলে তা যুক্তরাষ্ট্রকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আরও কড়া পদক্ষেপে নেওয়ার দিকে ধাবিত করবে। এমন কি হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম চালাবার বিষয়েও পদক্ষেপ নিতে হতে পারে তাদের। এতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির দূরত্ব তৈরি হবে এবং মিয়ানমার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের দিকে ঝুঁকে পড়বে।

শুক্রবারে ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত জানাতে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘টেরোরিজম অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী সিগাল মানদেলকার বলেছেন, ‘বার্মিজ নিরাপত্তা বাহিনী পুরো দেশ জুড়ে নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংস অভিযান চালিয়েছে। বিশেষ করে জতিগত নিধন, নির্বিচার হত্যা, যৌন সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য ভয়াবহ মানবাধিকার হরণের মতো অপরাধ সংগঠিত করেছে তারা। এত ব্যাপক মাত্রায় মানুষকে পীড়নের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সহিংসতার আদেশদাতা এবং তা পালনকারী ইউনিটের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো। বার্মিজ সেনাবাহিনী ও সেনা কর্মকর্তাদের তাদের কৃতকর্মের জবাবদিহিতা এবং এসব নির্মম কর্মকাণ্ড বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।