মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি ইউরোপীয় ইউনিয়নের

রোহিঙ্গাসহ অন্যান্যদের ওপর নিপীড়ন চালানো ও তা অব্যাহত রাখার দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারা বলেছে, মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতিতে কাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ইউরোপের বাজারে বিনা শুল্কে পণ্য রফতানির সুযোগ হারাবে দেশটি। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি এখন দিলেও ইইউ মিয়ানমারের অভিযুক্ত কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে।EU-Trade-Commissioner-Cecilia-Malmstrom-

সন্ত্রাস দমনের নামে মিয়ানমার সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করলে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এসব রোহিঙ্গা মিয়ানমারের সেনা সদস্যদের দ্বারা খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন নিপীড়নের শিকার হন। সারিবদ্ধভাবে বসিয়ে রেখে রোহিঙ্গাদের গুলি করে হত্যার ঘটনা সামনে আনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এ প্রেক্ষিতে ওই মিয়ানমারের দায়ী সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে ও পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে দেশটির ওপর বাড়তে থাকে বৈশ্বিক চাপ।

রাশিয়া ও চীনের বিরোধিতার মুখে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গত ২৪ অক্টোবর ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। কমিটির চেয়ারম্যান মারজুকি দারুসম্যান উল্লেখ করেছিলেন, মিয়ানমারে থেকে যাওয়া প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ওপর নিপীড়ন এখনও চলছে। এর ভিত্তিতে ইইউ কর্মকর্তারা পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করতে মিয়ানমারে যান। চার দিনের পরিদর্শন শেষে গত বুধবার তদন্তকারীরা ফিরে এলে ইইউয়ের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

মিয়ানমার পরিদর্শনে যাওয়া ইইউ কর্মকর্তারা দেশটির মন্ত্রী, শ্রমিক সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, নাগরিক সমাজ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন। রাখাইন, কাচিন ও শান প্রদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা ও তাদের শাস্তি নিশ্চিতে যৌথ প্রচেষ্টার বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি তারা বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ‘স্বেচ্ছাপ্রসূত, নিরাপদ এবং সম্মানজনক’ প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিস্থিতি গড়ে তোলার ওপর জোর দেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্যবিষয়ক কমিশনার সেসিলিয়া ম্যালমাস্ট্রম মিয়ানমার সফর শেষে দেওয়া বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বাণিজ্য সংক্রান্ত শর্তকে ভালো কিছু নিশ্চিত করার একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ইইউ আওতাধীন বাজারে প্রবেশের সুযোগ দেওয়াকে আমরা মৌলিক মানবাধিকার এবং শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতের পুরষ্কার হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। আমদের প্রত্যাশা, মিয়ানমারের তার কমতি থাকা দিকগুলোর উন্নতিতের বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। তা না করলে ইইউ আওতাধীন বাজারে পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ হারাতে হবে তাদের।’

ইইউ বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পায় ‘এভ্রিথিং বাট আর্মস’ (ইবিএ) কর্মসূচিভুক্ত দেশগুলো। তারা ইউরোপের বাজারে অস্ত্র ছাড়া যেকোনও পণ্য শুল্কমুক্তভাবে বিক্রি করতে পারে। মিয়ানমারের মতো অনুন্নত বেশ কয়েকটি দেশ ইবিএর সদস্য। ইইউয়ের পক্ষে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি পাওয়ার পর মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের কয়েকটি সংগঠন বলেছে, ইবিএ কর্মসূচির আওতা থেকে যদি মিয়ানমারকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে দেশটিতে কর্মরত সাড়ে চার লাখ পোশাক শিল্প শ্রমিকের অর্ধেকই জীবিকা হারাবে। আর পোশাক শিল্প খাতের রফতানি কমে যাবে ৪৭ শতাংশ।