বাংলাদেশিরা কেন অবৈধভাবে ভারতে থাকতে যাবে: প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন

কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাস্তবায়নে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন তুলেছেন, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষ কেন ভারতে থাকতে যাবে। আসামের নাগরিকত্ব তালিকা প্রসঙ্গে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। সম্প্রতি পাস হওয়া নাগরিকত্ব আইন সম্পর্কে তার ভাষ্য, ভারতের উচিত হবে না ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে হয়রানি করা। অভিবাসনকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি আসামে অবৈধ বাংলাদেশি থাকার অভিযোগ খতিয়ে দেখারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মধ্য দিয়ে সংকট উত্তোরণের পক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকারে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন শেখ হাসিনা।ww

আসামের জাতীয় নাগরিকত্ব তালিকা প্রণীত হওয়ার পর কয়েক প্রজন্ম আগে বাংলাদেশ থেকে আসামে যাওয়া মানুষদের আসামের বাসিন্দা হওয়ার প্রমাণ দাখিল করতে বলা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে নিউজ এইটিনের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার কাছে জানতে চাওয়া হয়, এর ফলে কয়েক প্রজন্ম আগে বাংলাদেশ থেকে আসামে যাওয়া বাংলাদেশিরা বিপদে পড়বে কিনা। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে অভিবাসন একটি খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ভারতের বহু মানুষ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে অভিবাসী হয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোতেও এটি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এখন যখন বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রগতি হচ্ছে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী শক্তিশালী হচ্ছে, তখন আমাদের দেশ থেকে মানুষ কেন ভারতে যাবে এবং সেখানে গিয়ে থাকবে, তা আমি বুঝতে পারি না।'

১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী জানতে পারেন, ভারতে ৬৪ হাজার বাংলাদেশি শরণার্থী রয়েছে। তিনি বলেন, 'পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর আমি তাদের ফেরত নিয়ে এসেছিলাম। (আসামের) বিষয়ে যে প্রশ্নটি উঠেছে আমরা সেটি খতিয়ে দেখব। শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আসামের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে এবং সমাধান খুঁজতে পারি।'

এ মাসে পাস হওয়া ভারতের নাগরিকত্ব বিলে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশকারী অমুসলিমদের (হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, শিখ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়) নাগরিকত্বের বিধান রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেছেন, 'ধর্ম বা অন্য কোনও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে কাউকে হয়রানির মধ্যে ফেলা উচিত হবে না। আমাদের দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি রয়েছে। বাংলাদেশে যাতে সব ধর্মের মানুষ শান্তিতে এবং আত্মমর্যাদারসঙ্গে ধর্ম পালন করতে পারে, আমরা সে ব্যবস্থা করেছি। ভারত একটি বড় দেশ। প্রতিবেশী হিসেবে আমি আশা করি, সব ধর্মের মানুষের শান্তিতে বসবাসের স্বার্থে তারা সেটা মনে রেখেই সিদ্ধান্ত নেবে।'
'ভারতবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা'র বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছন, 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছি, সে আমাদের দেশের ভেতর থেকেই হোক বা আমাদের প্রতিবেশী দেশেই হোক। আমরা এটা সহ্য করব না। উন্নয়নের জন্য আমাদের স্থিতিশীল পরিবেশ দরকার। অবশ্যই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। সব ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।'

50608258_2135994896483418_2070802899625050112_n