রোহিঙ্গাদের রাখাইনে মিয়ানমারের বিনিয়োগ মেলা

মিয়ানমার রাখাইনে বিনিয়োগ মেলার আয়োজন করেছে। তাদের প্রত্যাশা, অঞ্চলটিতে বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাবেন। বিনিয়োগ মেলার ওয়েবসাইটে ভারত ও বাংলাদেশের মতো বাজারের কাছে অবস্থিত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে রাখাইনকে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাখাইনে আয়োজিত মিয়ানমারের বিনিয়োগ মেলায় সহায়তা করেছে জাপান। মেলায় যোগ দিয়েছে এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ।55
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে শুরু হয় নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে।
এমন বাস্তবতায় রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। আগে থেকে উপস্থিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় দশ লাখে। এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে বসবাস করছে। রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ।
রাখাইনের বিনিয়োগ মেলায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নাগপালি সমুদ্র সৈকত স্বাগত জানিয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। তাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে পর্যটন শিল্পের উপযোগী সমুদ্র সৈকত ও ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানের তথ্য। বাংলাদেশ ও ভারতের মতো বাজারের কাছে অবস্থিত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবেও পরিচিত করিয়ে দেওয়া হয়েছে রাখাইনকে।
শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মেলায় উপস্থিত হয়েছেন অং সান সু চি স্বয়ং। সেখানে দেওয়া ভাষণে তিনি দায়িত্বশীল ব্যবসা পরিচালনা রীতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। রয়টার্স লিখেছে, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমারের দায়িত্বশীল আচরণের বিষয়ে কোনও কিছু বলা তো দূরে থাক, তিনি রোহিঙ্গা শব্দটিও উচ্চারণ করেননি।
রোহিঙ্গা নিপীড়নের প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমারে বিদেশি বিনিয়োগ যেমন কমে যায় তেমনি ধস নামে পর্যটন শিল্পে। সু চি চাইছেন নিজের দেশের এই বিনিয়োগ সংকট সমাধানে ভূমিকা রাখতে। রাখাইনের বিনিয়োগ মেলায় জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশের ব্যবসায়ীরা যোগ দিয়েছেন। এতে উপস্থিত হয়েছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারাও।
মিয়ানমার সরকার মনে করে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন রাখাইন অঞ্চলজুড়ে চলা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করবে। সেখানে রোহিঙ্গা সংকট যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সশস্ত্র আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া আরাকান আর্মি। বৌদ্ধ হলেও তারা মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বামার জনগোষ্ঠীর চেয়ে নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যে ভিন্ন।
রোহিঙ্গাদের ওপর যেমন নিপীড়ন চালিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী, ঠিক তেমনি এখন রাখাইনের বৌদ্ধদের (আরাকানি) সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে তারা। এতে রাখাইন অঞ্চলে সু চির দলের জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করেছে। অপরাপর রাজনৈতিক নেতারা সু চির পাশ থেকে সরে গিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন।