টাইম ম্যাগাজিনের প্রভাবশালীর তালিকায় শাহিনবাগের ‘দাদি’

হাড় হিম করা ঠান্ডার মধ্যেই দিল্লির শাহিনবাগে প্রস্তুতি চলছিল ‘হার না মানা’ আন্দোলন শুরুর। যেদিন শুরু হলো, সেদিনই সন্ধ্যাবেলা দেখা গেলো অবস্থান মঞ্চের সামনে এসে বসে পড়েছেন এক বৃদ্ধা! সঙ্গে বেশ কিছু শীতের পোশাক নিয়ে এসেছেন তিনি। আন্দোলনের উদ্যোক্তাদের জানিয়ে দিলেন, ওখানেই থাকবেন তিনি। যতদিন না বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) প্রত্যাহার হচ্ছে, যতদিন শাহিনবাগের জেদি জনতা রাস্তায় থাকবে ততদিন ওখানেই থাকবেন তিনি।

5

সেই ৮২ বছরের বিলকিস টানা ১০১ দিন ছিলেন শাহিনবাগের ওই ধরনা মঞ্চের সামনে। করোনা সতর্কতায় ২৪ মার্চ ধরনা তুলে দেয় পুলিশ। তারপর বাড়ি যান বিলকিস। সেই তাকেই ২০২০ সালের সেরা ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় রেখেছে টাইম ম্যাগাজিন।

শাহিনবাগেই বাড়ি তার। স্বামী মারা গিয়েছেন বছর ১৫ আগে। দুই সন্তানের কাছেই থাকেন তিনি। কিন্তু গোটা শাহিনবাগ এখন তাকে দাদি নামেই ডাকে। শুধু তা-ই নয়, তার নেতৃত্বেই অসংখ্য দাদির সমাগম ঘটেছিল শাহিনবাগে। মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল বিলকিসের কথা। তারপর অসংখ্য বৃদ্ধা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আন্দোলনে যোগ দেন। সেই শাহিনবাগের দাদিই এখন আন্তর্জাতিক ‘মুখ’।

বিশেষ বিশেষ দিনে তার বক্তৃতা ঝড় তুলে দিতো শাহিনবাগের ওই চত্বরে। ২৬ জানুয়ারি সকালে রোহিত ভেমুলার মাকে নিয়ে ওই মঞ্চে দাঁড়িয়েই জাতীয় পতাকা উড়িয়েছিলেন ‘দাদি’। একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তার সাক্ষাৎকার।

তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘মোদি-অমিত শাহ, আপনারা দেশের শাসক। সব ক্ষমতা আপনাদের হাতে। ভয় দেখিয়ে সবাইকে থামিয়ে দিতে চান আপনারা। কিন্তু আমায় পারবেন না। যতদিন প্রাণ আছে, আমি বলে যাবো। একাই লড়ে যাবো।’

শাহিনবাগে গুলিবর্ষণের মুহূর্তে মঞ্চে বসেছিলেন দাদি। তারপর বলেছিলেন, আসলে মানুষের আন্দোলনের চাপে ওরা ভয় পেয়েছে। তাই এভাবে দূর থেকে গুলি ছুড়ে ভয় দেখাতে চাইছে।

লকডাউনের জন্য যেদিন ধরনাস্থল ছেড়ে বাড়ি ফিরছেন বিলকিস, সেদিন বলে গিয়েছিলেন ‘আবার আসবো। অনেক বড় লড়াই বাকি রয়েছে।’