মিয়ানমার থেকে চাল কিনবে বাংলাদেশ

১৬ কোটি জনসংখ্যার খাদ্য সংকট মোকাবিলায় মিয়ানমারের কাছ থেকে এক লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। গত বছরের বন্যায় ফসলের ক্ষতি এবং ত্রাণ কার্যক্রমে প্রায় শূন্য হয়ে যায় চালের মজুত। ফলে বাজারে চালের মূল্য অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় এবং ফলশ্রুতিতে সরকারি চালের মজুত বৃদ্ধির সব চেষ্টাই অসফল রয়ে যাচ্ছে। এজন্য রোহিঙ্গা সংকটকে পাশ কাটিয়েই এ সিদ্ধান্ত নিতে হলো সরকারকে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, ‘চালের মূল্য, বাণিজ্য বিমা ও আন্তঃপরিবহনসহ সব খরচ হিসেবে প্রতি টন ৪৮৫ মার্কিন ডলার মূল্যে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় আন্ত-সরকার চুক্তির (জি-টু-জি) আওতায় চাল ক্রয় করবে বাংলাদেশ।’

নাজমানারা আরও বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য চালের দাম স্থিতিশীল করা’।

খাদ্য সচিব জানান, চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে সরকারিভাবে ১ কোটি টন এবং বেসরকারি আমদানিকারকদের আরও এক কোটি টন চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। তিনি বলেন, ‘খুব শিগগির এ বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে এবং এপ্রিলের মধ্যে ধাপে ধাপে চাল দেশে আনা হবে।’

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যাকাণ্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের বাস্তবতায় জীবন বাঁচাতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এই নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক কিছুটা শীতল রয়েছে।

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নাফেড থেকে আরও দেড় লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানির বিষয়ে কয়েক দফায় টেন্ডার প্রকাশ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতের বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। খাদ্য সচিব বলেন, ‘আমরা ভারত থেকে আন্ত-সরকার চুক্তির মাধ্যমে আরও চাল আমদানি করতে পারবো।’

উল্লেখ্য, প্রতি বছর প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন চাল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। তবে বন্যা, খরা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানার পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যশস্যের চাহিদা পূরণে অনেক সময় বাংলাদেশ চাল আমদানি করে থাকে।