সংকট নিরসনে আগাম নির্বাচনে সম্মত আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী

বিরোধীরা নির্দিষ্ট শর্তে রাজি হলে আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচন আয়োজনে রাজি থাকবেন বলে জানিয়েছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান। সোমবার রাজধানী ইয়েরেভেনে পাল্টাপাল্টি ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে এই ঘোষণা দেন তিনি। একই সঙ্গে নতুন সংবিধান গ্রহণে আগামী অক্টোবরে গণভোট আয়োজন এবং আগাম নির্বাচনের জন্য কিছু শর্তও জুড়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত বছর নাগোরনো-কারাবাখে আজারবাইজানের কাছে আর্মেনিয়ার পরাজয়ের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে। গত মাসে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হয়। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে তিনি সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার অভিযোগ এনে তাকে বরখাস্তের চেষ্টা করেন। এই ঘটনার পর বিক্ষোভ আরও জোরদার হয়েছে। সোমবার বিক্ষোভকারীদের একটি দল পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে।

পরে ইয়েরেভেনে সমবেত সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে আগাম নির্বাচনে নিজের সম্মতির কথা জানিয়ে কিছু শর্ত জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান। ২০১৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা এই প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব হলো, আগাম নির্বাচনের আগে পার্লামেন্টের দলগুলোকে একটি সমঝোতায় স্বাক্ষর করতে হবে, যেখানে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে নির্বাচনে কোনও পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রীকে আর প্রার্থী করা চলবে না।

সমর্থকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী পাশিনিয়ান বলেন, ‘পার্লামেন্টের বিরোধী দলগুলো আগাম নির্বাচনে রাজি হলে আমরাও তাতে রাজি। চলুন নির্বাচনে যাওয়া যাক আর দেখা যাক মানুষ কাদের পদত্যাগ চাইছে।’ নিজের ভুল হয়েছে স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানান পাশিনিয়ান।

উল্লেখ্য, ১৯৮০-এর দশকের শেষদিকে কারাবাখ অঞ্চলে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মুহূর্তে সংঘর্ষ চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। ১৯৯৪ সালে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত এ সংঘর্ষে ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়। কারাবাখ অঞ্চলটি আজারবাইজানের ভূখণ্ড হলেও ইয়েরেভান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করছে আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। মূলত এ নিয়েই সংঘাতের সূত্রপাত।

নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে দীর্ঘ বিবাদের জেরে ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে দুই দেশ। এতে উভয় পক্ষের বহু মানুষ হতাহতের পর শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে আর্মেনিয়া পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করে থাকে দেশটির বিরোধী দলগুলো।