টয়লেট ব্যবহারেই মিলবে অর্থ

দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে টয়লেট ব্যবহার করেই আয় করা যায় ডিজিটাল কারেন্সি। সেই মুদ্রায় নানা ধরনের ফলমূলের পাশাপাশি কফিসহ আরও কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যও কেনা যায়।

উলসানের ওই টয়লেটটির ডিজাইন করেছেন ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ইউএনআইএসটি)-র আর্বান অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক চো জায়-এয়ন। পরিবেশবান্ধব ওই শৌচাগারের নাম দিয়েছেন বীভি। ইংরেজি বি এবং ভিশন শব্দ দুটোর প্রথম অংশ নিয়ে তৈরি এই নামেই শুধু নয়, এর কার্যকারিতায়ও দূরদর্শিতার ছাপ রেখেছেন চো জায়-এয়ন।

তার ভাবনা ছিল এমন টয়লেট তৈরি করা যেখানে টয়লেট ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভূমিকা রাখা যাবে, সেই বিদ্যুতে আলো জ্বলবে ভবনে। ফলে মলত্যাগ করেও অর্থ আয় করা যাবে।

এমন ভাবনাতেই আটকে থাকেননি চো জায়-এয়ন। নিজের এমন চিন্তার বাস্তবায়নও করে দেখিয়েছেন তিনি। বীভি-তে রয়েছে মলকে মাটির নিচের একটি ট্যাংকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা। ভবনের পাশেই রয়েছে ল্যাবরেটরি। মাটির নিচে মল থেকে তৈরি হয় মিথেন গ্যাস। ল্যাবরেটরিতে রাখা যন্ত্রের সহায়তায় সেই মিথেন থেকে তৈরি হয় বিদ্যুৎ।

একজন ব্যক্তি একবারে গড়ে ৫০০ গ্রামের মতো মলত্যাগ করে। এটি দিয়ে তৈরি হয় ০.৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ, যা দিয়ে একটা গাড়ি অনায়াসে ১.২৫ কিলোমিটার পথ চলতে পারে।

টয়লেটে শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনেরই ব্যবস্থা করেননি প্রফেসর চো। মলের বিনিময়ে অর্থ উপার্জনেরও ব্যবস্থা রেখেছেন তিনি। জিগুল নামের একটি ভার্চুয়াল কারেন্সি তৈরি করেছেন যার বিনিময়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের দোকান থেকে নিয়মিত বই, নুডলস, বিভিন্ন ধরনের ফল, কফি ইত্যাদি কিনছেন।

একবার টয়লেটে গেলে আয় হয় ১০ জিগুল। যার যত জিগুল জমবে, তত বেশি পণ্য কিনতে পারবে সে। শিক্ষার্থী হেও হুই-জিন তো মহাখুশি। তার ভাষায়, ‘এতোদিন মনে করতাম এটি খুব নোংরা জিনিস, এখন সেই জিনিসই আমার কাছে খুব মূল্যবান। এখন তো খাওয়ার সময়ও কোনও বই কেনার কথা মাথায় এলে এটি নিয়ে কথা বলি!’

প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও টয়লেট ব্যবহারে অর্থ দেওয়ার ঘটনা বিশ্বে এটিই প্রথম নয়। খোলা জায়গায় মলত্যাগ বন্ধে ২০১৫ সালে ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদ শহরের কর্তৃপক্ষ এমন একটি প্রকল্প চালু করেছিল। সেখানে শিশুদেরকে টয়লেট ব্যবহারের বিনিময়ে অর্থ ও চকলেট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক চো জায়-এয়ন যা করে দেখিয়েছেন সেটি নজর কেড়েছে অনেকের। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস।