পশ্চিম আফগানিস্তানে তালেবানের সঙ্গে চুক্তির স্বীকারোক্তি গভর্নরের

আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় বাদঘিস প্রদেশে তালেবানের সঙ্গে চুক্তির স্বীকারোক্তি দিয়েছেন রাজ্যের গভর্নর হুসামুদ্দিন শামস। বৃহস্পতিবার তিনি জানিয়েছেন, স্থানীয় প্রশাসন তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উপনীত হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রদেশটির রাজধানীতে আরও হামলা রোধকল্পে তারা তালেবানদের সঙ্গে ‘অনির্দিষ্টকালের যুদ্ধবিরতি’ নিয়ে আলোচনা করেছেন।

তালেবান বাদঘিস প্রদেশের রাজধানীর বাইরে থাকা সবকটি জেলার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর দলটির সঙ্গে আলোচনার পথ বেছে নেন কর্মকর্তারা।

প্রাদেশিক গভর্নর হুসামুদ্দিন শামস বলেন, উপজাতিদের মধ্য থেকে ১০ জন মুরব্বি যুদ্ধবিরতির দায়িত্ব নিয়েছেন। তারা তালেবান ও স্থানীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলেন। পরে উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হয়।

বাদঘিস প্রাদেশিক কাউন্সিলের প্রধান আবদুল আজিজ বেক বলেন, কালা-এ-নাও আফগানিস্তানের একমাত্র শহর যেখানে তালেবান যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে।

তালেবানের একজন মুখপাত্র অবশ্য যুদ্ধবিরতি চুক্তির কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বেসামরিক মানুষের হতাহতের ঘটনা এড়াতে তারা শহরটি ছেড়ে গেছে। কাবুলে আফগান কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

আফগানিস্তানে ক্রমবর্ধমান বৈরিতার তীব্রতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে রাশিয়া। তবে দেশটির বিশ্বাস, এই মুহূর্তে ক্ষমতা দখল নয় বরং শক্তি সঞ্চয়ে মনোযোগী তালেবান। তুর্কি সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজ দেশের এমন মনোভাবের কথা জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্টের আফগানিস্তান বিষয়ক দূত জামির কাবুলোভ। তিনি বলেন, মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আফগানিস্তানের যেসব সীমান্ত রয়েছে সেসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি সংঘাত চলছে। আর এই অঞ্চলের দেশগুলো রাশিয়ার মিত্র ও অংশীদার।

জামির কাবুলোভ বলেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী প্রায় পুরোপুরি প্রত্যাহারের পটভূমিতে বিশেষ করে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে বৈরিতার তীব্রতা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতি মস্কোকে উদ্বিগ্ন না করে পারে না। একইসঙ্গে রাশিয়ার বিশ্বাস, এই মুহূর্তে তালেবানের সহিংস উপায়ে ক্ষমতা দখলের কোনও আশঙ্কা নেই।

এই কূটনীতিক বলেন, সংঘর্ষ মূলত মফস্বল এলাকায় ঘটছে। শহরগুলো কঠিন অবরোধের মুখে পড়লেও সেগুলোতে হামলা চালানো হবে না। তালেবানের উদ্দেশ্য হচ্ছে শান্তি আলোচনা শুরুর আগে তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করা। ক্ষমতা দখলের নেতিবাচক পরিণতি সম্পর্কে তারা অবগত। সে ধরনের পরিস্থিতি তারও চায় না। তারা তাদের অভিপ্রায়ের কথা জানিয়েছে। তারা আলোচনার মাধ্যমে সংকট উত্তরণ বা পুনর্মিলনে আগ্রহী।

এদিকে বিদেশি বাহিনীর আফগানিস্তান ত্যাগের ডামাডোলে দেশটিতে একের পর এলাকার দখল নিচ্ছে তালেবান। এরইমধ্যে ইরান, তাজিকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি বর্ডার ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দলটি। সর্বশেষ বুধবার পাকিস্তান সীমান্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বর্ডার ক্রসিংয়ের দখল নিয়েছে তারা। কান্দাহারের কাছে স্পিন বোলডাক ক্রসিংয়ের ছাদে ওড়ানো হয়েছে তালেবানের সাদা পতাকা। তবে ক্রসিংটির নিয়ন্ত্রণ হারানোর কথা অস্বীকার করেছেন আফগান কর্মকর্তারা। যদিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে তালেবান যোদ্ধাদের পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা গেছে। বিবিসি জানিয়েছে, বিনা প্রতিরোধেই ক্রসিংটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান।

আফগান কর্তৃপক্ষের দাবি, বেদখল হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ক্রসিংটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সমর্থ হয়েছে তারা। তবে সরকারের এমন দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ। সূত্র: রয়টার্স।