পাকিস্তানের ১০ হাজার 'জিহাদি যোদ্ধা' আফগানে ঢুকেছে: আশরাফ ঘানি

পাকিস্তান থেকে সম্প্রতি ১০ হাজার ‘জিহাদি যোদ্ধা’ আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছে বলে অভিযোগ করেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। এমনকি আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য অনেকটা পাকিস্তানকে দায়ী করেছেন তিনি। শুক্রবার সেন্ট্রাল অ্যান্ড সাউথ এশিয়া রিজিওনাল কানেকটিভিটি সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও আফগান প্রেসিডেন্টের মধ্যে কথার লড়াই হয়। সম্মেলনে অংশ নেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও।

বৈঠকে আফগানিস্তানের চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ে কথার যুদ্ধে জড়ান আফগান প্রেসিডেন্ট ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে আফগানজুড়ে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করেন আশরাফ ঘানি। আলোচনার এক পর্যায়ে গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে প্রেসিডেন্ট ঘানি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, গত মাসে পাকিস্তানের সীমান্ত পেরিয়ে ১০ হাজারেরও বেশি জিহাদি যোদ্ধা আফগানিস্তানে অনুপ্রবেশ করেছে। পাকিস্তান এখনও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী ইমরান বলেন, আফগান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশটি হচ্ছে পাকিস্তান। গত ১৫ বছরে এখানে ৭০ হাজার প্রাণহানি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহারের তারিখ ঘোষণার পর তালেবান কার্যকর বৈঠকে বসেনি। যখন আফগানিস্তানে দেড় লাখ ন্যাটো সেনা ছিল, তখনই তালেবানকে গুরুত্ব নিয়ে বৈঠকে বসানোর প্রয়োজন ছিল। তালেবানকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে পাকিস্তানের মতো কেউ চেষ্টা করেনি।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ জানিয়ে আরও বলেন, 'আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি পাকিস্তানের চেয়ে কোনও দেশই তালেবানকে সংলাপের টেবিলে নেওয়ার কঠোর চেষ্টা করেনি। সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে সত্যিকার অর্থে আলোচনার টেবিলে আনা এবং শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসা করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছি। আর বর্তমানে আফগানিস্তানে যা চলছে তার জন্য ইসলামাবাদকে দোষী করাটা সত্যিই অন্যায়'।

এদিকে আফগানিস্তানের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ অভিযোগ করে বলেন, দু’দেশের মধ্যকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ক্রসিংয়ে বিমান বাহিনীর মাধ্যমে তালেবান বিদ্রোহীদের সহায়তা করছে প্রতিবেশী পাকিস্তান। তিনি বলেন, স্পিন বোলদাক চেক পোস্ট সম্প্রতি তালেবান গোষ্ঠী দখলের দাবি করছে। আর তাদের ওপর কোন হামলার চেষ্টা হলে আফগান বিমান বাহিনীকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি দিয়ে রেখেছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। যদিও এই ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে পাকিস্তানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে পাকিস্তান। শুক্রবারের তিন দেশের মধ্যে আলোচনায় ভারত-পাকিস্তানের প্রসঙ্গের চেয়ে আফগানিস্তান ইস্যুতেই উত্তপ্ত ছিল। 

আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো ও মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময় যত ঘনিয়ে আসছে জটিল হচ্ছে এই অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বিদেশি সেনা প্রত্যাহার শেষের দিকে চলে আসায় আফগানিস্তানে তালেবানের আধিপত্য বেড়েই চলছে। এতে আতঙ্কে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও ভারত। আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ আসন্ন উল্লেখ করে এর সমাধানে বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্র প্রধানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে আসছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।