তালেবানে বাস্তববাদী ও কট্টরপন্থীদের বিরোধ বাড়ছে

তালেবান নেতৃত্বে বাস্তববাদী ও আদর্শগত কট্টরপন্থী অংশের মধ্যে বিরোধ বাড়ছে। গত সপ্তাহে কট্টরপন্থীদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠনের এই বিরোধ জোরালো হয়েছে। নতুন মন্ত্রিসভাটি সাম্প্রতিক অন্তর্ভুক্তিকরণের প্রতিশ্রুতির চেয়ে তালেবানের প্রথম শাসনামলের কঠোর আইনের সঙ্গে বেশি সংগতিপূর্ণ। কাবুলে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত দুই আফগানকে উদ্ধৃত করে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি এখবর জানিয়েছে।

খবরে বলা হয়েছে, তালেবান নেতাদের এই টানাপড়েন পর্দার আড়ালে ঘটছে। কিন্তু এই বিষয়ে জল্পনা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ প্রেসিডেন্ট প্যালেসে দুই পক্ষের সহিংস সংঘর্ষের পর তার আরও জোরদার হয়েছে। গুজব ছড়ায় বাস্তববাদী অংশের নেতা আবদুল গণি বারাদার নিহত হয়েছেন।

গুজবটি এত জোরালো ছিল যে তালেবানের পক্ষ থেকে বারাদারের অডিও এবং হাতে লেখা বার্তা প্রকাশ করা হয়। তালেবান দাবি করেছে, এগুলো বারাদারের নিজের। অস্বীকার করা হয়েছে তার নিহতের কথা। পরে বুধবার বারাদার আফগানিস্তানের জাতীয় টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে হাজির হয়েছেন।

নিহতের গুজবের বিষয়ে বারাদার বলেছেন, আমি কাবুল থেকে ভ্রমণে ছিলাম। তাই এমন খবর অস্বীকার করতে মিডিয়া কাছে হাজির হওয়ার সুযোগ ছিল না।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে তালেবানের প্রধান মধ্যস্থতাকারী ছিলেন বারাদার। এই চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ছেড়ে যায়। যা ৩০ আগস্ট সম্পন্ন হয়। এর দুই সপ্তাহ আগে তালেবান কাবুল দখল করে।

কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর পরই বারাদারই ছিলেন প্রথম সিনিয়র তালেবান কর্মকর্তা যিনি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারের সম্ভাব্যতার কথা বলেছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহে কেবল পুরুষ ও কেবল তালেবান নেতাদের সরকার গঠন করায় এই সম্ভাবনার মৃত্যু হয়।

কট্টরপন্থীরাই যে এখন প্রভাবশালী ও তাদের নিয়ন্ত্রণে আফগানিস্তান সেটির ইঙ্গিত উঠে আসে যখন আফগানিস্তানের জাতীয় পতাকার বদলে তালেবানের সাদা পতাকা দেশটির প্রেসিডেন্ট প্যালেসে উড়তে দেখা যায়।

এক তালেবান কর্মকর্তা জানান, নেতারা এখনও পতাকার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। অনেকেই দুই পতাকা পাশাপাশি উড়ানোর কথা সমর্থন করছেন।

নিরাপত্তা স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই আফগান জানান, মন্ত্রিসভা নিয়ে গোষ্ঠীটির মধ্যে বিরোধ বাড়ছে। একজন জানান, মন্ত্রিসভার এক সদস্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। দেশের জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাদ দিয়ে কেবল তালেবান সরকার গঠনে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি এই অস্বীকৃতি জানান।

সরকারি অনুষ্ঠানে নেই বারাদার

তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ নেতাদের বিরোধের কথা অস্বীকার করেছেন। মঙ্গলবার তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এমন খবরকে প্রোপাগান্ডা বলে উল্লেখ করেছেন।

প্রকাশ্যে অস্বীকার করলেও গত কিছুদিন ধরে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে মোল্লা বারাদারের উপস্থিতি নেই। এমনকি এই সপ্তাহে কাতারের উপ-প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল-থানিকে অভ্যর্থনা জানাতে প্রেসিডেন্ট প্যালেসে ছিলেন না তিনি। তার অনুপস্থিতি আলোচনার জন্ম দিয়েছে কারণ দীর্ঘদিন ধরে কাতারে রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান ছিলেন তিনি।

কিন্তু বুধবার প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে বারাদার বলেছেন, কাতারি মন্ত্রীর সফর সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না। বলেন, আমি কাবুল ছেড়ে চলে আসি এবং ফিরতে পারিনি।

বারাদারের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও আফগান এর আগে বলেছিনে, তালেবান নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার সঙ্গে বৈঠকের জন্য তিনি কান্দাহার রয়েছেন।

আরেক তালেবান সদস্য জানান, কান্দাহার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন বারাদার। যুদ্ধের কারণে গত বিশ বছর তাদের সঙ্গে তার দেখা হয়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিরোধ আপাতত তালেবানের জন্য গুরুতর কোনও হুমকি হয়ে দেখা দেবে না। ওয়াশিংটনভিত্তিক উইলসন সেন্টারের এশিয়া প্রোগ্রামের উপ-পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, অনেক বছর ধরে আমরা দেখে আসছি বিরোধের পরও তালেবান মূলত ঐক্যবদ্ধ সংগঠন হিসেবে বিরাজ করছে এবং এই বিরোধের পরও তাদের বড় সিদ্ধান্তে কোনও গুরুতর পিছিয়ে আসার সম্ভাবনা কম।  

তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয় অভ্যন্তরীণ এই বিরোধ সামলে নেবে তালেবান। এরপরও তাদেরকে অনেক চাপে থাকতে হবে। কারণ তাদের ক্ষমতা সুসংহত, বৈধতা আদায় এবং বড় ধরনের নীতিগত চ্যালেঞ্জ সমাধান করতে হবে। এগুলোতে যদি ব্যর্থতা আসে তাহলে যে কোনও সংগঠনেই অভ্যন্তরীণ বিরোধ চরম হয়ে উঠতে পারে।