তালেবান ধ্বংসযজ্ঞ: ২০০১ সালে বামিয়ান, ২০২১-এ গিরিশ্ক

প্রগতিশীল, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক যেকোনও অর্জনকে ধ্বংস করতে তালেবানরা কখনও পিছপা হয়নি। নিজেদের যতই সংস্কারবাদী দাবি করুক, এবারও তারা সেই পরিচয় টিকিয়ে রেখেছে। ২০০১ সালে সারাবিশ্বের প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাঁদিয়ে ভেঙে ফেলা বামিয়ান জোড়া বুদ্ধমুর্তির পর ২০২১-এ এসে একের পর এক ইন্সটিটিউট বন্ধ ও ভাঙচুরের পর সর্বশেষ গুঁড়িয়ে ফেলা হলো ঐতিহ্যবাহী গিরিশ্ক কেল্লাও।

দেশটির ঐতিহ্য, স্থাপনা, পুরাকীর্তি নিয়ে তাই প্রবল শঙ্কায় আছে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাকটিভিস্টরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ব মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা প্রশ্ন তুলেছেন, ধ্বংসযজ্ঞের তালিকায় এরপর কোনটা?

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে ছড়িয়ে পড়ে গিরিশ্ক ধ্বংসের চিত্র। তাতে দেখা যায় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে ফেলা হচ্ছে একটি ঐতিহাসিক কেল্লা।

গিরিশ্ক কেল্লা গুড়িয়ে ফেলার ভিডিও থেকে ছবি

গিরিশ্ক একটি সমৃদ্ধ কৃষি এলাকার কেন্দ্র। শহরটি মূলত একটি নদীর ডান তীরে একটি দুর্গকে ঘিরে নির্মিত হয়েছিল। পরে বাম তীরে পুনর্নির্মাণ করা হয় নগরটি। প্রথম অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধের সময়কার (১৮৩৯-৪২) একটি দুর্গ এই কেল্লা। যা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিজবুল্লাহ খান টুইটারে লেখেন, আবারও তালেবানরা আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক স্থাপনায় আঘাত করা শুরু করেছে। এবার টার্গেট গিরিশ্ক কেল্লা।

তালেবানের শিল্প সংস্কৃতিকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ইতিহাস নতুন নয়। ১৯৯৭ সালে আব্দুল ওয়াহেদ নামের এক তালেবান কমান্ডার বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি দুটি ধ্বংসের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি মূর্তি দুটিতে ফুটো করে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে দেন। সেই দফায় মূর্তি দুটি রক্ষা পায়।

২০০১ সালে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন বাহিনীর আগ্রাসনের পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল তালেবানরা। সেই সময়ও তারা একের পর এক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ধ্বংস করেছিল দেশটির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। আফগানিস্তানের গৌরবোজ্জ্বল অতীত এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের নীরব সাক্ষী যেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বুদ্ধমূর্তি দুটি।

ষষ্ঠ শতাব্দীতে বৌদ্ধদের অন্যতম কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয় এই বামিয়ান। কয়েক হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষুর বসবাস ছিল এই উপত্যকায়। ২০০১ সালে হামলা চালিয়ে এটি প্রায় ধ্বংস করে দেয় তালেবানরা।

বন্ধ হয়ে গেলো ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মিউজিক

আগস্টের শেষে কাবুলের আফগানিস্তান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মিউজিকের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অনুষদরা বাড়িতে থাকলেও কেউই নিরাপদ বোধ করছেন না। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক আহমদ সরমস্তের মতে, সম্প্রতি সশস্ত্র তালেবানরা স্কুলের আঙ্গিনায় প্রবেশ করেছিল। তারা স্কুলে যাতায়াতে ব্যবহৃত গাড়িটি চুরির চেষ্টা করেছে। বাদ্যযন্ত্র ধ্বংস করেছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত বাদ্যযন্ত্রের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষন্নতা আর ক্ষোভের সৃষ্টি হয় বিশ্বজুড়ে।

এ পরিস্থিতিতে কাবুলের জাতীয় জাদুঘরের সুরক্ষা নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান ক্ষমতায় থাকার সময় এ জাদুঘরে লুটতরাজ চলে। অভিযোগ ছিল, ইরাক ও সিরিয়া যুদ্ধে উগ্রবাদীরা কালোবাজারে শিল্পকর্ম বিক্রি করে তহবিল সংগ্রহ করেছে। অনেকের আশঙ্কা- এবারও তালেবান একই উদ্দেশ্যে জাদুঘরে লুটপাট চালাতে পারে। তাদের প্রশ্ন- বিশ্ব কি এসব ধ্বংস ঠেকাতে আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেবে?