আফগান স্কুলে নতুন এক কঠোর বাস্তবতার মুখে মেয়ে ও নারীরা

আফগানিস্তানে নতুন তালেবান সরকার মেয়ে ও নারীদের শিক্ষা নিয়ে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। যদিও তারা দাবি করে চলেছে, কিছু দিনের মধ্যে মেয়েদের স্কুল চালু হবে।

একটি বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালক মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে তালেবানের পরিকল্পনার বিস্তারিত জানতে ভীষণ বেপরোয়া। কিন্তু তালেবান কমিটির সাপ্তাহিক বৈঠকগুলোতে তিনি উপস্থিত হতে পারছেন না। কারন এসব বৈঠক কেবল পুরুষের জন্য।

সৈয়দ উল-শুহাদা হাই স্কুলের একটি ভাঙাচোরা ভবনের ভেতরে আকিলা নামের পরিচালক বলেন, তারা বলে, আপনার উচিত এক পুরুষ প্রতিনিধি পাঠানো।  

অবশ্য আকিলা ও আফগানিস্তানে শিক্ষাদানে নিয়োজিত তালেবান শাসনে নারী শিক্ষার নির্মম বাস্তবতা অনুধাবনের জন্য এসব বৈঠকে হাজির হওয়ার প্রয়োজন নেই। তালেবান এরই মধ্যে স্পষ্ট করেছে তারা গত ২০ বছর ধরে শিক্ষাগত যেসব স্বাধীনতা ও অধিকার পেয়ে আসছিলেন সেগুলোর বিষয়ে গুরুতর কঠোরতা আরোপ করা হবে।

এমন পরিস্থিতিতে একমাত্র প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, নতুন যে ব্যবস্থা তালেবান জারি করবে তা কতটা কালা কানুন হবে এবং নারী ও মেয়েদের জন্য কোনও ধরনের ইসলামভিত্তিক শিক্ষা প্রচলন করা হবে। যেমনটি তারা ১৯৯০ দশকে প্রথম শাসনামলে করেছিল। তালেবান শুধু যে নির্দেশের দ্বারাই শাসন করে তা নয়, তারা অনুমান ও ভীতি প্রদর্শন করে।

শনিবার যখন দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল পুনরায় চালু হয়, তখন শুধু ছেলে শিক্ষার্থী ও পুরুষ শিক্ষকদের স্কুলে হাজির হতে বলা হয়েছে। এসব শ্রেণিতে অধ্যয়নরত মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কিছু তারা বলেনি। ফলে মেয়েদের বাড়িতেই থাকতে হচ্ছে, তাদের পরিবার উদ্বিগ্ন এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা। তবে প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির ছেলে ও মেয়েরা প্রাথমিক স্কুলে যাচ্ছে। তবে উপরের তিনটি ক্লাসে ছেলে ও মেয়েদের আলাদা ক্লাসে অধ্যয়ন করতে হচ্ছে।

১৯৯৬-২০০১ সালের শাসনামলে তালেবান নারী ও মেয়েদের স্কুলে পড়া নিষিদ্ধ করেছিল। ২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানে তালেবানরা উৎখাত হলে মেয়েরা বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়। নারীরা পড়াশোনা শেষে করে বাণিজ্য, সরকার, চিকিৎসা ও আইন পেশায় নিজেদের নিয়োজিত হয়।

ইউনেস্কোর প্রতিবেদন অনুসারে, আফগানিস্তানে নারীদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ২০১৮ সালে ছিল ৩০ শতাংশ। কিন্তু ১৫ আগস্ট তালেবান ক্ষমতা দখলের পর বলে আসছে, ইসলামি শরিয়াহ আইনের অধীনে নারীদের বিভিন্ন অধিকার দেওয়া হবে। গোষ্ঠীটি শরিয়াহ আইনের কঠোর ব্যাখ্যা সমর্থন করে। নতুন সরকার বলে আসছে, কিছু মাত্রায় মেয়ে ও নারীদের শিক্ষার অনুমোদন দেওয়া হবে। কিন্তু এই মাত্রা তালেবান কর্মকর্তারা এখনও সুনির্দিষ্ট করেননি।

তালেবান আরও ইঙ্গিত দিয়েছে যে, মেয়ে ও নারীদের শিক্ষাদানে পুরুষরা নিয়োজিত হতে পারবে না। এতে বড় ধরনের শিক্ষক সংকট দেখা দিতে পারে। সঙ্গে রয়েছে শিক্ষকদের বেতন দিতে না পারা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাতিল হওয়া। ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে তাই আফগানিস্তানের শিক্ষায় জরুরি ও গুরুতর পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস