ক্ষুধা মেটাতে সন্তান বিক্রি করছে আফগান পরিবার

বন্ধুদের সঙ্গে দড়ি-লাফ খেলে বাড়ি ফেরার পরই হাসি মলিন হয়ে যায় আফগানিস্তানের নয় বছরের মেয়ে শিশু পারওয়ান মালিকের। জানতে পারে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ৫৫ বছর বয়সী এক ‘বুড়ো লোক’ তাকে শিশুবধূ হিসেবে কিনে নিয়েছে। গত ২২ অক্টোবর পারওয়ান মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন-কে জানায় তার আশঙ্কার কথা। তার আশঙ্কা হলো, পাকা চুল দাড়ির লোকটি তাকে বাড়িতে নিয়ে মারবে আর কাজ করতে বাধ্য করবে।

নিরুপায় হয়ে পারওয়ানের পরিবার তাকে বিক্রি করে দিয়েছে। চার বছর ধরে পরিবারটি একটি আফগান বাস্তুচ্যুত শিবিরে বসবাস করে। মানবিক ত্রাণের ওপর নির্ভর করে টিকে আছে পরিবারটি। গত ১৫ আগস্ট তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর তাদের অবস্থা আরও নাজুক হয়ে ওঠে।

আন্তর্জাতিক সহায়তা তলানিতে পৌঁছালে পরিবারটি খাবারের মতো নিত্য প্রয়োজন মেটাতেই হিমশিম খেতে থাকে। ভেড়া, জমি ও অর্থ মিলিয়ে পারওয়ানকে বিক্রি করে তার বাবা পেয়েছেন দুই লাখ আফগানি মুদ্রা। পারওয়ানকে বিক্রির কয়েক মাস আগে তার ১২ বছর বয়সী বোনকে বিক্রি করেছে তার পরিবার।

শুধু পারওয়ান বা তার বোন নয়, আফগানিস্তানের বহু মেয়ে শিশুকে বিয়ের নামে বিক্রি করে দিচ্ছে তাদের পরিবার। দেশটিতে মানবিক সংকট গভীর হতে থাকায় ক্ষুধার যন্ত্রণায় বহু পরিবার এই হৃদয় বিদারক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে। বিশেষ করে তীব্র শীতের দিন সামনে আসতে থাকায় তা মোকাবিলায় অর্থ সংগ্রহে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরিবারগুলো।

আফগানিস্তানের বাগদিস প্রদেশের মানবাধিকার কর্মী নাইম নাজিম বলেন, ‘দিন দিন সন্তান বিক্রি করে দেওয়া পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। খাদ্যের অভাব, কাজের অভাবে এগুলো করতে বাধ্য হচ্ছে এসব পরিবার।’

পারওয়ানার বাবা আবদুল মালিক বলেন, তিনি রাতে ঘুমাতে পারেন না। লজ্জা, অপরাধবোধ আর দুশ্চিন্তায় মন ভেঙে যাচ্ছে তার। মেয়েকে বিক্রি না করার সব চেষ্টা তিনি করেছেন। প্রাদেশিক রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেও কাজ খুঁজে পাননি। আত্মীয়-স্বজনের কাছে ধার করেছেন। তার স্ত্রী অন্যদের কাছে খাবার ভিক্ষা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারে আট সদস্য। পরিবারের অন্যদের বাঁচিয়ে রাখতে তাকে আমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।’