খায়রুজ্জামানকে বাংলাদেশে ফেরানো ঠেকালো মালয়েশিয়ার হাইকোর্ট

বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ খায়রুজ্জামানকে ঢাকায় ফেরানো আটকে দিয়েছে মালয়েশিয়ার হাইকোর্ট। বিচারপতি মোহাম্মদ জাইনি মাজলান মঙ্গলবার এই বিষয়ে অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়েছেন। খায়রুজ্জামানের স্ত্রী রিটা রহমানের আইনজীবীর করা আবেদন আমলে নিয়ে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে।

ফ্রি মালয়েশিয়ার টুডে'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সাবেক রাষ্ট্রদূত ৬৫ বছরের খায়রুজ্জামানকে ফেরত পেতে চায় বাংলাদেশ। তবে এর কোনও কারণ জানানো হয়নি। কিন্তু তার স্ত্রী রিটা রহমান দাবি করেছেন বাংলাদেশ সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশে তাকে গ্রেফতার করতে চায়।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ার আমপাং এলাকার বাড়ি থেকে খায়রুজ্জামানকে গ্রেফতার করে দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। সাবেক এই কূটনীতিকের আইনজীবী দলের দাবি তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের (ইউএনএইচসিআর) কার্ডধারী রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী। এছাড়া তিনি কোনও অভিবাসন নীতি ভঙ্গ করেননি বলেও দাবি আইনজীবীদের। সেকারণে এই গ্রেফতারকে বেআইনি বলে দাবি করছেন আইনজীবীরা।

খায়রুজ্জামানের আবেদন মঞ্জুর করে বিচারপতি মোহাম্মদ জাইনি মাজলান বলেন, ‘আমি শুনতে চাই না যে তাকে এই আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’ এর আগে গত বছর আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে মিয়ানমারের এক বন্দিকে ফেরত পাঠায় মালয়েশিয়ার অভিবাসন কর্মকর্তারা। বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন খায়রুজ্জামানের আইনজীবী এডমুন্ড বোন। এরপরই ওই মন্তব্য করেন বিচারপতি।

তবে আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে অ্যাটর্নি জেনারেলের চেম্বারে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষের আইনজীবী। আগামী ২০ মে আদালতে খায়রুজ্জামানের আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় জড়িত সন্দেহে সাবেক সেনা কর্মকর্তা খায়রুজ্জামান অভিযুক্ত ছিলেন। ১৯৭৫ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি পাওয়ার পরে তিনি মিসর, ফিলিপাইন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে তাকে অবসরে পাঠানো এবং গ্রেফতার করা হয়। ২০০৩ সালে বিএনপি সরকারের আমলে তিনি চাকরিতে মহাপরিচালক হিসেবে পুনর্বহাল হন। পরের বছর নির্দোষ বলে আদালত রায় দেন। ২০০৫ সালে তিনি মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত হন। পরে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মালয়েশিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত হন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাকে ডেকে পাঠানো হলে তিনি বিপদ আঁচ করতে পেরে কুয়ালালামপুরে জাতিসংঘ উদ্বাস্তু কার্ড সংগ্রহ করেন এবং ওই সময় থেকে তিনি মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিলেন।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের অনুরোধে খায়রুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়েছে: মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী