চর্মরোগে মরছে হাজারো গরু

গরুকে আমরা পরিবারের সদস্য হিসেবে দেখি,’ বলছিলেন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় গুজরাট রাজ্যে বসবাসকারী আব্বাসভাই। পরিবারের মোট ১১ গরুর মধ্যে তিনটি হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে গেছেন তিনি। গত জুলাইয়ে চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে এগুলো মারা যায়। ইতোমধ্যে একই রোগে আক্রান্ত হয়েছে তার আরও তিন গরু।

আব্বাসভাইয়ের মতো গুজরাটের হাজারো পশু মালিকের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে লাম্ফি স্কিন নামের এই চর্মরোগ। গুজরাট ছাড়াও আরও অন্তত তিনটি প্রদেশ রাজস্থান, পাঞ্জাব এবং হিমাচল প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, এটি ভেক্টর জনিত পক্স রোগ।

এই সংক্রমণের কারণ ক্যাপ্রিওপক্স ভাইরাস। জিনগতভাবে এই ভাইরাসের মিল রয়েছে ছাগলের পক্স ও ভেড়ার পক্সের জন্য দায়ী ভাইরাসের সঙ্গে। ভ্যাকসিন জোট জাভি এই ভাইরাসকে ‘বিশ্বজুড়ে প্রাণীসম্পদের উদ্ভূত হুমকি’ বলে বর্ণনা করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহিষের চেয়ে গরুকে বেশি সংক্রমিত করে তুলতে পারে এই ভাইরাস।

বহু বছর ধরে আফ্রিকার দেশগুলো স্থানীয় মহামারি হিসেবে থেকেছে এই রোগ। পরে সময়ের সঙ্গে বিশ্বের অন্য স্থানেও ছড়িয়ে পড়েছে তা। এফএও এর প্রতিবেদন অনুযায়ী রোগটি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম দেখা যায় ২০১৯ সালের জুলাই মাসে। বাংলাদেশে প্রথম এই রোগ দেখা যায়। এক মাস পর এটি ভারত ও চীনে শনাক্ত হয়।

সাধারণত এই সংক্রমণ ছড়ায় মশা, এঁটুল এবং অন্য রক্তচোষা পতঙ্গের প্রজাতির মাধ্যমে। রাজস্থানের সিনিয়র ভেটেনারি কর্মকর্তা ড. রবি ইসরানি বলেন, ‘এই রোগে প্রাণীর শরীরে পিণ্ড তৈরি হয় এবং যখন মাছি এবং মশা তাদের উপর বসে তখন তারা অন্যান্য সুস্থ প্রাণীতে সংক্রমণ স্থানান্তর করে’। তিনি আরও জানান বর্ষার মৌসুমে এই ভারি বর্ষায় এই সংক্রমণ আরও মারাত্মক হতে পারে।

এই রোগে আক্রান্ত পশুর জ্বর হতে পারে। একই সঙ্গে এতে আক্রান্ত হলে প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়, কমে যায় দুধ উৎপাদন ক্ষমতা। ফলে দুধ বিক্রি করে টিকে থাকা পরিবারগুলোর জন্য এই রোগ ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। ড. রবি ইসরানি জানান এই রোগে মৃত্যুর হার এক থেকে পাঁচ শতাংশ হতে পারে।

গুজরাট রাজ্য প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী এই রোগে এখন পর্যন্ত দুই হাজার ছয়শ’ পশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ের খবর অনুযায়ী মৃত পশুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে। প্রতিবেশি রাজ্য রাজস্থানে মারা গেছে প্রায় ছয় হাজার পশু।

গুজরাটের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত জেলাগুলোর একটি কুচ। সেখানকার এক বাসিন্দা জানান প্রতিদিন সেখানে ৩০ থেকে ৪৯টি গরুর মারা যাচ্ছে।

পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশের আরও শত শত পশু এই সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছে। গুজরাটের এনিম্যাল হাজবেন্ডারি বিভাগের কর্মকর্তা অনিল ভিরানি বলেন, ‘আমরা দেখেছি ছাগলের পক্সের ভ্যাকসিন এই রোগের বিরুদ্ধে ক্ষেত্রেও কার্যকর আর এটি কার্যকর হতে ১৫-২০ দিন সময় নেয়’।

রাজস্থান এবং গুজরাটের কৃষকেরা অভিযোগ করছেন সংক্রমণ ঠেকাতে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি রাজ্য সরকার। তবে উভয় রাজ্যের প্রশাসনিক কার্যক্রম রোগ মোকাবিলায় সচেষ্ট হয়ে উঠেছে। গুজরাটের কৃষিমন্ত্রী রাঘবজি পাটেল জানিয়েছেন রাজ্যে এখন পর্যন্ত তিন লাখ পশুকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি