গ্রেফতার এড়াতে ইমরানের শক্তি প্রদর্শন ‘একেবারে বোকামি’

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেফতারে তার লাহোরের বাসভবনে পুলিশ পৌঁছার ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সদস্যরা জামান পার্ক নামের বাসভবনের কাছে পৌঁছার পর পিটিআই সমর্থকদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। রাতভর সংঘর্ষের পর বুধবার ভোরে নতুন করে পুলিশ ও র‍্যাঞ্জার সদস্যরা ইমরানকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে। কিন্তু সফলতা আসেনি। এক পর্যায়ে পুলিশ পিএসএল ম্যাচের কথা তুলে ধরে বাসভবন থেকে পিছু হটে। পরে লাহোর হাই কোর্ট বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত পুলিশকে অভিযান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

পাকিস্তানের ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘিরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে। এসব ফুটেজে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী-বাহিনী বাড়িটিকে প্রবেশের চেষ্টা করছে মরিয়া হয়ে। আর পিটিআইয়ের সমর্থকরা প্রত্যেকবার তাদের ঠেকিয়ে দিচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা গেছে, পিটিআই সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করছে। মাঝে মধ্যে ব্যাটন দিয়েও আঘাত করতে দেখা গেছে।

সংখ্যায় কয়েকশ’ বিক্ষোভকারী পিছু হটতে রাজি হয়নি। তারা লাঠি ও ইট-পাটকেল ছুঁড়ে পুলিশ সদস্যদের দিকে। কর্মকর্তারা বলেছেন, অন্তত ৫৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ইসলামাবাদ পুলিশের ডিআইজি শাহজাদ নাদিম বুখারি রয়েছেন। তিনি এই গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।

একজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা কতটা কঠিন? কেন পিটিআই তার গ্রেফতার এড়াতে চাইছে? পাকিস্তানের সাংবাদিক ও আইনজীবীরা টুইটারে নিজেদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছেন। একেক জন একেকটি তত্ত্বের কথা সামনে আনছেন।

আইনজীবী রিমা ওমর বলেছেন, বারবার আদালতে হাজির না হওয়া এবং গ্রেফতার এড়ানোর জন্য ইমরান খানের কোনও নৈতিক বা আইনি ন্যায্যতা নেই। পিটিআই নেতার এই প্রচেষ্টা হলো ‘রাষ্ট্রের ভেতর আরেকটি রাষ্ট্র’ তৈরির চেষ্টা। যা দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

এমন বক্তব্যের সঙ্গে সবাই একমত নন। সাংবাদিক আতিকা রহমান বলেছেন, ইমরান খানকে কতবার গ্রেফতারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র, এই হিসাব তিনি ভুলে গেছেন।

সাংবাদিক মুবাশির জাইদি বলেছেন, বাসা থেকে বের হয়ে গ্রেফতার হয়ে রাজনীতিক হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ হারিয়ে ফেলেছেন ইমরান খান। তিনি লিখেছেন, রাজনীতিক নেতারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন, গোত্র নেতাদের মতো মানবঢালের আড়ালে লুকিয়ে থাকেন না।

কাস্টডিতে হত্যা করা হতে পারে যে আশঙ্কার কথা ইমরান খান বলেছেন সেটিকে হালকা করে বিবেচনার ঘটনায় অবাক হয়েছেন সাংবাদিক সাহার হাবিব গাজি। তার কথায়, নব্বই দশক থেকে পাকিস্তানের রাজনীতি বিভক্ত, বিদ্বেষপূর্ণ, প্রতিশোধ পরায়ণ। সবচেয়ে ক্ষমতাশীলরা টিকে আছে।

ইমরান খানের গ্রেফতার এড়ানোর কৌশলকে ‘একেবারে বোকামি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন উপস্থাপক কামরান খান। তিনি বলেছেন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কারণে ইমরান খান লাহোর থেকে লস অ্যাঞ্জেলস পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন কাভারেজ পাচ্ছেন পিটিআই নেতা।  

সাংবাদিক জারার খুহরো ইঙ্গিত দিয়েছেন, পুলিশের কর্মকাণ্ড প্রমাণ করছে নির্বাচন পেছানোর জন্য পটভূমি তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছাড়িয়ে যদি নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হয় তাহলে পার্লামেন্ট নিয়ে কথা বলার কোনও অধিকার থাকবে না।

উপস্থাপক ও কলামিস্ট আরিফা নুর এই ঘটনাকে ‘আমাদের সমন্বিত ব্যর্থতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

আইনজীবী আসাদ রহিম পিটিআই সমর্থকদের মানবঢাল হিসেবে বর্ণনা করার সমালোচনা করেছেন।  

সূত্র: ডন