চীনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে এবার যুক্তরাষ্ট্রগামী আইফোন ও অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন ভারত ও ভিয়েতনামে সরিয়ে নিচ্ছে অ্যাপল। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী টিম কুক জানিয়েছেন, শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রীত অধিকাংশ আইফোন ভারতেই তৈরি হবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এক সম্মেলনকালে টিম কুক বলেন, আমরা প্রত্যাশা করছি, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রীত অধিকাংশ আইফোনের উৎপাদনস্থল হবে ভারত।
একই সঙ্গে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইপ্যাড, ম্যাক, অ্যাপল ওয়াচ ও এয়ারপডসের প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র হবে ভিয়েতনাম।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের শুল্কনীতির কারণে এই রূপান্তর প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলে জানায় অ্যাপল। ট্রাম্প প্রশাসনের আমদানিকৃত পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কের ফলে চলতি প্রান্তিকে অ্যাপলের খরচ প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে এই শুল্কের প্রভাব কিছুটা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর শুল্ক ছাড় দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবু বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যনীতির এই নাটকীয় পরিবর্তনে কোম্পানিগুলোকে নতুন করে চিন্তা করতে হচ্ছে।
অ্যাপলের ওপর দীর্ঘদিন ধরেই চাপ ছিল উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে নেওয়ার। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার বলেছিলেন, অ্যাপলের উচিত আমেরিকাতেই আইফোন তৈরি করা।
তবে টিম কুক আলোচনার শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপলের ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, আমরা আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবো।
চীনকে বাদ দিয়ে আইফোন তৈরি সম্ভব নয়—টিম কুক আগে এমন মন্তব্য করলেও এখন সেই অবস্থান পাল্টাচ্ছে অ্যাপল। এই পরিবর্তনকে ‘গুরুত্বপূর্ণ মোড়’ বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষক প্যাট্রিক মুরহেড।
তিনি বলেন, মাত্র কয়েক বছর আগে কুক বলেছিলেন, কেবল চীনই আইফোন তৈরি করতে পারে। এখন তিনি বলছেন ভারতই হবে মূল কেন্দ্র। এটি একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
তবে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে ভারত বা ভিয়েতনামে স্থানান্তর সহজ নয়। এতে সময় ও বিপুল বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন এমঅ্যান্ডজি ওয়েলথের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা শান্তি কেলেমন।
তিনি বলেন, সাপ্লাই চেইন স্থানান্তরের জন্য এখনও শুল্ক প্রভাবিত হবে, এবং নতুন কারখানা গড়তে বিপুল অর্থ ব্যয় হবে। অ্যাপল নিজেই বলেছে, তারা আগামী কয়েক বছরে ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায়।
সব অনিশ্চয়তার মধ্যেও অ্যাপলের আয় বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব দাঁড়িয়েছে ৯৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে, আরেক প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যামাজনের আয়ও বেড়েছে। উত্তর আমেরিকায় তাদের ই-কমার্স ব্যবসার বিক্রি ৮ শতাংশ বেড়েছে। অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী অ্যান্ডি জ্যাসি বলেন, কেউই নিশ্চিতভাবে জানে না শুল্কনীতিগুলো কোথায় গিয়ে স্থির হবে। তবে আমরা অতীতেও মহামারি ও সংকট সামলে উঠে আরও শক্তিশালী হয়েছি।
চলতি প্রান্তিকে অ্যামাজনের মোট বিক্রি ৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৫৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার এবং মুনাফা ৬০ শতাংশের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলারে।
অ্যামাজন ও অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সরবরাহ ব্যবস্থায় বহুমুখিতা আনতে চাইছে। এতে করে একটি দেশের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা এড়ানো যাবে এবং বৈশ্বিক সংকটে সরবরাহ বিঘ্নিত হলেও বিকল্প পথ খোলা থাকবে।
এই পরিবর্তন প্রযুক্তি দুনিয়ায় বড় একটি বার্তা দিচ্ছে। আর তা হলো চীন-নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের নতুন মানচিত্র গড়ে তুলছে শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।