গত বুধবার পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের গভীরে প্রবেশ করে এক বিশাল হামলা চালায় ভারত। মূলত পেহেলগামে পাকিস্তান সমর্থিত জঙ্গি হামলায় ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়াও ছিল এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য। ভারতের সরকার জানিয়েছে, এই অভিযান ছিল সম্পূর্ণ সফল। ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির চোখে কেমন ছিল এই অভিযান? কী অর্জন এসেছে অপারেশন সিঁদুরের নিখুঁত সন্ত্রাসবিরোধী হামলার মাধ্যমে-সেটাই তুলে ধরেছে এনডিটিভি।
নয়টি জঙ্গি শিবির ধ্বংস
অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অবস্থিত নয়টি ‘জঙ্গি ঘাঁটি’ ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত। এই ঘাঁটিগুলো ছিল জঙ্গি সংগঠন- লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মহম্মদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের। এই ঘাঁটিগুলোকে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ ও কার্যকরী কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে গভীর হামলা
পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে গভীরে আঘাত হানার সদিচ্ছা প্রদর্শন করে ভারত যুদ্ধনীতির ধরণ বদলে দিয়েছে। জঙ্গি এবং জঙ্গি-পৃষ্ঠপোষকরা আলাদা নয় বরং উভয়কে লক্ষ্য করে একটি নতুন নীতির সূচনা করেছে ভারত।
হামলাগুলো শুধু পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে নয়, পাকিস্তানের ভেতরে শত শত কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এমনকি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশেও জঙ্গি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়, যা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কৌশলগত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
ভারত এমন সংবেদনশীল জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা করেছে যেমন: বাহাওয়ালপুর, যেখানে এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও কখনও ড্রোন পাঠানোর সাহস দেখায়নি।
ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সন্ত্রাসবাদ পাকিস্তান থেকে এলে সীমান্ত রেখা বা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ভূগোল কোনও বাধা নয়। এই হামলার মাধ্যমে ভারত প্রমাণ করেছে যে পাকিস্তানের প্রতিটি ইঞ্চি ভারতীয় হামলার আওতাভুক্ত।
রেড লাইন
অপারেশন সিঁদুর এমন এক রেড লাইন তৈরি করেছে যা পাকিস্তান আর উপেক্ষা করতে পারবে না। তাদের রাষ্ট্রীয় নীতিতে সন্ত্রাসের ব্যবহার করলে এর প্রতিক্রিয়া হবে লক্ষ্যভেদী ও দৃশ্যমান।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নতুন ধারা
প্রথমবারের মতো ভারত স্পষ্টভাবে জঙ্গি ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে পার্থক্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং উভয়ের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি সেই দীর্ঘদিনের ধারণাকেও নস্যাৎ করেছে যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রভাবশালী কিছু দুষ্কৃতকারী উপাদান অনায়াসে সন্ত্রাস চালাতে পারে।
পাকিস্তানের দুর্বল বিমান প্রতিরক্ষা
ভারতীয় বাহিনী সফলভাবে পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। মাত্র ২৩ মিনিটের মধ্যে পরিচালিত দ্রুত ও নিখুঁত হামলা পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতাই প্রকাশ করে।
ভারতীয় রাফাল যুদ্ধবিমান কোনও ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই মিশন সম্পন্ন করে, যা প্রযুক্তিগত এবং কৌশলগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করে।
ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতার প্রদর্শন
ভারত আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষার রূপান্তরিত রূপ তুলে ধরেছে। নিজস্ব আকাশসীমা সুরক্ষায় একটি শক্তিশালী ও স্তরযুক্ত কাঠামো তৈরি করেছে।
ভারত সফলভাবে পাকিস্তানের ব্যবহৃত চীনা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো ভেদ করেছে। প্রতিরক্ষা মানে শুধু কেনাকাটা নয়, বরং তার কার্যকর সংযোজন-এটাই প্রমাণ করেছে।
এছাড়া ভারতের আকাশতীর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শত শত পাকিস্তানি ড্রোন ও মিসাইল ভূপাতিত করে তার কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে এবং এখন এটি বৈশ্বিক রপ্তানিযোগ্য পণ্যে পরিণত হয়েছে।
উত্তেজনা ছাড়াই সুনির্দিষ্ট হামলা
জঙ্গি অবকাঠামো ছাড়া প্রাথমিকভাবে কোনও সামরিক বা বেসামরিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। বড় মাত্রায় উত্তেজনা সৃষ্টি না করেই ভারত তার শূন্য-সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করেছে।
গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গিবাদীদের নির্মূল
ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত একাধিক জঙ্গি নিহত হয়েছে। এক রাতেই বহু জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্ব ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের সামরিক কাঠামোর ক্ষতি
৯ ও ১০ মে রাতের অভিযানে ভারত এমন দেশ হয়ে উঠেছে, যারা একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের বিমান ঘাঁটিগুলোতে ক্ষতি সাধন করেছে। তিন ঘণ্টার মধ্যে ১১টি ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে – যার মধ্যে রয়েছে নুর খান, রফিকি, মুরিদ, সুক্কুর, শিয়ালকোট, পাসরুর, চুনিয়ান, সারগোধা, স্কারু, ভোলারি এবং জ্যাকবাবাদ।
হামলায় পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ২০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। ভারতের হামলায় ভোলারি ঘাঁটিতে পাকিস্তানের স্কোয়াড্রন লিডার উসমান ইউসুফ ও চারজন বিমানসেনাসহ ৫০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন এবং পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে।
যৌথ-সেনা সমন্বয়
ভারতীয় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সমন্বিতভাবে হামলা চালিয়েছে – যা ভারতের ক্রমবর্ধমান যৌথ যুদ্ধক্ষমতার প্রমাণ।
বিশ্বকে পাঠানো বার্তা
ভারত বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে, জনগণকে রক্ষা করতে অনুমতির অপেক্ষা করা হবে না। সন্ত্রাসকে শাস্তি দেওয়া হবে – যেকোনও সময়, যেকোনও স্থানে। তারা দেখিয়ে দিয়েছে যে সন্ত্রাসবাদ ও তাদের পরিকল্পনাকারীদের জন্য আর কোনও নিরাপদ আশ্রয় নেই।
যদি পাকিস্তান প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে ভারত কেবল তা প্রতিহত করতেই সক্ষম নয়, প্রয়োজনে জবাবি হামলায় আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে।
বিশ্বব্যাপী সমর্থন
আগে যখনই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু সংঘাতমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হতো, অধিকাংশ দেশ ভারতকে সংযমের আহ্বান জানাত। কিন্তু এবার, বহু বিশ্বনেতা ভারতের সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন।
কাশ্মীর নিয়ে বিবর্তিত বর্ণনা
প্রথমবার ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক কেবল সন্ত্রাসবাদের আলোকে দেখা হয়েছে। কাশ্মীর ইস্যু থেকে এটি পুরোপুরি আলাদা করা হয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি