কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় টানা বৃষ্টির ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনাযসহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলার নদীর পানি উপচে বন্যা দেখা দিয়েছে। চাষের জমি ও জনপদ প্লাবিত হয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, মঙ্গলবার দিনভর হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি চলবে কলকাতা এবং দক্ষিণের জেলাগুলিতে। বৃষ্টির সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়াও বইতে পারে।
কলকাতা শহরে গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার ভারী বৃষ্টিতে বহু রাস্তা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ কলকাতা থেকে শুরু করে উত্তর শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি জমায় যান চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বহু জেলায় স্কুল-কলেজ ছুটি ঘোষণা করতে হয়েছে। রেললাইনে পানি জমার কারণে ট্রেন পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে।
শিয়ালদহ বিভাগের মেন লাইন এবং বনগাঁ শাখার বেশির ভাগ ট্রেন নির্ধারিত সময় থেকে দেরিতে চলছে। দক্ষিণের বেশির ভাগ জেলাতেই একই পরিস্থিতি। গত ২৪ ঘণ্টায় আলিপুরে ৮১.৬ মিলিমিটার, দমদমে ৯৯.৩ মিলিমিটার এবং সল্টলেকে ৮৮.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
লালবাজার, ফিয়ার্স লেন, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, নর্থ পোর্ট থানা এলাকাসহ বেশ কিছু জায়গা জলমগ্ন। কোথাও কোথাও পানি হাঁটু ছুঁয়েছে। বিভিন্ন গলিপথও জলমগ্ন। ফলে উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতা— সর্বত্র ভোগান্তিতে পড়েছেন শহরবাসী।
কলকাতা পৌরসভা সূত্রের খবর, প্রবল বৃষ্টির ফলে ঠনঠনিয়া, কলেজ স্ট্রিট, বৌবাজারের একাংশ থেকে শুরু করে বেহালা, গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পানি জমেছে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রশাসন ইতোমধ্যেই দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও রাজ্য বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতর একাধিক জেলায় উদ্ধারকার্য শুরু করেছে। বহু পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও শক্তি সঞ্চয় করে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এর ফলে রাজ্যের উপকূলবর্তী ও সংলগ্ন জেলাগুলোতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই সময়ের এই অকাল বৃষ্টি ও প্লাবনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমন ধানের বীজতলা ও শাকসবজি চাষে। রাজ্য সরকার কৃষকদের জন্য জরুরি ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে।
এদিকে পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকে নাগরিকদের অপ্রয়োজনে বাইরে না বেরোনোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি নদীবাঁধ ও খালগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে যাতে অতিরিক্ত জলস্রোতের ফলে বিপর্যয় না ঘটে।
সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের সঙ্গে সাধারণ মানুষও যেন সক্রিয়ভাবে মোকাবিলায় অংশগ্রহণ করেন, সেই আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।