ভারতের রাজধানী দিল্লি ও বাণিজ্য নগরী মুম্বাইসহ একাধিক শহরে ভারী বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিল্লিতে অন্তত চারজন নিহত এবং এক ডজনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। প্রবল ঝড়ো হাওয়ায় গাছ উপড়ে পড়েছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে এবং জলাবদ্ধতায় তৈরি হয়েছে যানজট। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
দিল্লির পাশাপাশি মুম্বাইয়ে প্রাক-মৌসুমি বৃষ্টিপাতে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভারতের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী ৬ থেকে ৭ দিন দেশের পশ্চিম উপকূলজুড়ে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এর পাশাপাশি দেশের দক্ষিণাংশে অন্তত ১২টি রাজ্যে বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
বুধবার দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় ৫০টি ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বিলম্বিত হয় এবং এক ডজনের মতো ফ্লাইট অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
এদিন সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়ে ভারতের বৃহত্তম বিমান সংস্থা ইন্ডিগোর একটি ফ্লাইট, যেটি জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরের দিকে যাচ্ছিল। মাঝ আকাশে শিলাবৃষ্টির মধ্যে পড়ে তীব্রভাবে কাঁপতে থাকে উড়োজাহাজটি। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, যাত্রীরা আতঙ্কে চিৎকার করছেন। পরে সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানায়, ফ্লাইটটি নিরাপদে অবতরণ করেছে, তবে উড়োজাহাজটির সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, যার ব্যাপারে ইন্ডিগো এখনও কিছু বলেনি।
দিল্লি মেট্রো কর্তৃপক্ষ এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক পরামর্শবার্তায় জানায়, গাছ ও অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ লাইনে পড়ে থাকার কারণে মেট্রো চলাচলে বিলম্ব হতে পারে।
মুম্বাইয়ের অভিজাত অঞ্চল আন্ধেরিতে প্লাস্টিক ব্যাগ ও আবর্জনায় ডুবে যায় রাস্তাঘাট। নর্দমা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শহরের বিভিন্ন অংশে পানি জমে যায়। এই দৃশ্য ভাইরাল হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই শহরের দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ড্রেনেজ অবকাঠামোর সমালোচনা করেন।
এর আগে সপ্তাহের শুরুতে একনাগাড়ে বৃষ্টিতে ভারতের প্রযুক্তি নগরী বেঙ্গালুরু কার্যত অচল হয়ে পড়ে। সেখানে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, মানুষ হাঁটুজলে হেঁটে চলাচল করছেন, বহু গাড়ি আটকে আছে এবং অনেক বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।
ভারত বছরে মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় ৮০ শতাংশই পায় জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৌসুমি বর্ষায়। কৃষিনির্ভর দেশ হিসেবে এই মৌসুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনিয়মিত আবহাওয়া, অকাল বৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা ও খরার ঘটনা বাড়ছে—যা লাখো মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করছে।