শিমলা চুক্তি বাতিলের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়নি পাকিস্তান

ভারতের সঙ্গে শিমলা চুক্তি বাতিল করার কোনও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দেশটির পররাষ্ট্র দফরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ভারতের সঙ্গে কোনও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বাতিলের বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন এ খবর জানিয়েছে।

এর আগে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ জিও নিউজ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, শিমলা চুক্তি বর্তমানে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে এবং ভারতের একতরফা অবস্থানের কারণে এর প্রাসঙ্গিকতা নষ্ট হয়েছে।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও অবনতির প্রেক্ষাপটে সিন্ধু পানি চুক্তি (আইডব্লিউটি) একতরফাভাবে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে আসিফ বলেছিলেন, এই চুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত রাখার কোনও সুযোগ নাই। তিনি উল্লেখ করেন, চুক্তি অনুযায়ী কোনও সিদ্ধান্ত নিলে তা উভয় পক্ষের সম্মতিতেই হতে হবে।

তবে আসিফের মতে, যদি ভারত একতরফা আচরণ শুরু করে, তাহলে শিমলা চুক্তিও আর কার্যকর থাকে না। কারণ এই চুক্তিতে কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতা ছিল না। তিনি বলেছিলেন, এক্ষেত্রে ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণভোট সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) আবার যুদ্ধবিরতি রেখায় ফিরে যেতে পারে।

আসিফ আরও বলেছিলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিকভাবে সমস্যা সমাধানের যে শর্ত শিমলা চুক্তিতে ছিল, তা আজ কার্যকর নয়। যুদ্ধ ও পরিবর্তিত বাস্তবতা শিমলা চুক্তিকে মূল্যহীন করে তুলেছে।

১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে স্বাক্ষরিত শিমলা চুক্তিতে বলা হয়েছিল, উভয় দেশ একতরফা কোনও পদক্ষেপ নেবে না এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যা সমাধানে একমত হবে।

কিন্তু পাকিস্তান দাবি করছে, ২০১৯ সালে ভারত একতরফাভাবে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নিয়ে চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। সেইসঙ্গে বাইরের রাজ্যের বাসিন্দাদের জমি কেনার সুযোগ দিয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটির জনসংখ্যাগত কাঠামো পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ পাকিস্তানের।

গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে সিন্ধু পানি চুক্তি তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয় ভারত। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানও জানায়, তারা ভারতের সঙ্গে শিমলা চুক্তিসহ সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি পর্যালোচনার আওতায় আনবে। এর পাশাপাশি ইসলামাবাদ ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ, নয়াদিল্লির সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিতসহ একাধিক পাল্টা পদক্ষেপ নেয়। ভারত অবশ্য সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ হাজির করেনি।